ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) থানাগুলো যেন একেকটা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিটি থানার বাইরে পরে থাকে কোটি কোটি টাকা মূল্যের প্রাইভেট কার, বাস থেকে ট্রাক। খোলা আকাশের নিচে বছরে পর বছর পরে থেকে কোনোটির আসন খোয়া গেছে, কোনোটির নেই দরজা, আবার কোনোটির শুধু কাঠামো পড়ে আছে। বিভিন্ন মামলার আলামত হিসেবে এসব গাড়ি জব্দ করা হয়। অনেকে আইনি জটিলতা এড়াতে গাড়ি উদ্ধারে থানায় যান না, আবার আইন অনুযায়ী গাড়িগুলো বুঝিয়ে দিতেও আছে অনীহা।
হঠাৎ দেখলে পরিত্যক্ত গাড়ির ভাগাড় বলে ভুল হতে পারে। আসলে এটি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার বাইরের দৃশ্য। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিকশা, বাস, ট্রাক- কী নেই এখানে!
মামলার আলামত হিসেবে এসব গাড়ি জব্দ করা হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খোলা আকাশের নিচে দিনের পর দিন পরে থেকে নষ্ট হচ্ছে সাধারণের মূল্যবান সম্পদ।
রাজধানীর প্রায় প্রতিটি থানার সামনে এমন চিত্র। এক গাড়ি মালিক বলেন, আমি আমার গাড়ির জিপিএস ট্র্যাকারটির কোনো সিগন্যাল পাচ্ছিলাম না। গাড়িটি বন্ধ অবস্থায় পাচ্ছিলাম। গাড়ির লোকেশন ধরে আমি গিয়ে দেখি গাড়িটি ঠিক রামপুরা থানার সামনে পড়ে আছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে একটি বড় ধরনের ভোগান্তির শিকার হয়েছিলাম।
বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে জব্দ গাড়িগুলো দ্রুত ছাড়া যায় না বলে জানায় ডিএমপি।
ডিএমপির উপ-কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, গাড়ির কাগজপত্র, ফিটনেস অথবা দীর্ঘ দিনের ট্যাক্স বাকি আছে। অথবা তারা চোরাই গাড়িটা ব্যবহার করতেছে, নিজেদের নামে নাম ট্রান্সফার করে নাই। এসব নানা কারণে এই গাড়িগুলো তারা থানা থেকে নিতে আসে না। ফলে দীর্ঘদিন এই গাড়িগুলো থানা চত্বরে বা থানার পাশে ডাম্পিংয়ে থাকে। এতে গাড়িগুলো নষ্ট হয় এবং থানার পরিবেশ নষ্ট হয়।
অথচ সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী এভাবে জনগণের সম্পদ ধ্বংস করার কোনো সুযোগ নেই।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ব্যক্তির একটি দায় থাকতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই এই গাড়ি অনির্দিষ্টকালের জন্য থানায় রাখতে পারেন না। যদি কেউ আবেদন করেন ওই আবেদনের আইনানুগ সময়ের মধ্যে এটা নিষ্পত্তি করতে হবে। যদি কেউ আবেদন না করে থাকেন তাদের আভ্যন্তরীণ যে বিধি আছে, সে অনুযায়ী এই গাড়ি যেন নষ্ট না হয় সেজন্য তারা সরকারের যে সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের ব্যবহারের জন্য দিতে পারেন। কোনোভাবেই এই গাড়ি ডাম্পিংয়ে রেখে বিনষ্ট বা ধ্বংস করা বা ব্যবহারের অনুপযোগী করা সম্পূর্ণ আইন বিরুদ্ধ। যারা এটা করছেন তারা হয় দায়িত্ব অবহেলা করছেন, অথবা এটি কিন্তু তাদের এক ধরনের অপরাধের মধ্যেই পড়বে।
শুধু যে দামি গাড়ি নষ্ট হচ্ছে তাই না, রাস্তা আর ফুটপাথ দখল করে চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি আর যানজটের কারণ হচ্ছে জব্দ করা এসব যানবাহন।