
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবুল কালামের কয়েকটি ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সহকর্মী নারী ভাইস চেয়ারম্যানের শ্লীলতাহানীসহ বহু ঘটনার জনক আবুল কালামের জন্য এটা নতুন কিছু নয় বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার আলীকদমের মিরিনচর পাড়ায় চেয়ারম্যানকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রুমপাও ম্রো ফুলের মালা পরিয়ে দেন। চেয়ারম্যান তার ফেসবুক একাউন্টে ছবিগুলো প্রকাশ করলে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, একজন জনপ্রতিনিধি একজন নারীকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে পারেন কি না।
আলীকদম উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কাইনথপ ম্রো বলেন, ছবি চেয়ারম্যান নিজেই প্রকাশ করেছেন। এটা ঠিক হয়নি, এতে ম্রো জাতির সম্মানহানি হয়েছে।
প্রকাশিত চারটি ছবির বাইরে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া আরো কয়েকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ম্রো নৃগোষ্ঠীর এক নারীকে জনসমক্ষে জড়িয়ে ধরে আছেন আবুল কালাম। ওই নারীর অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট যে, তিনি এতে খুবই অস্বস্তি বোধ করছেন এবং জোর করে চেয়ারম্যানের হাত থেকে ছুটে যেতে চেষ্টা করছেন। চেয়ারম্যান জোরপূর্বক এই আদিবাসী নারীকে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এই ছবি নিয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ করেনি এই ম্রো নারীর পরিবার থেকে। ম্রো নারীর ভাই মেন রুং ম্রো এমএনপি ( ম্রো ন্যাশনাল পার্টি)-এর কমান্ডারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে চেয়ারম্যান আবুল কালাম ওই পাড়ায় গিয়ে সংবর্ধনা নিয়ে আসেন।
আরো জানা গেছে, আলিকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালামের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ২০১০ সালের ৯ জুন আলীকদম উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমান) শিরিন আক্তার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। উপজেলা বিএনপির নেত্রী ওই মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের মামলার কারণে সেসময়ে জেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ১৩ সালের ২৮ নভেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দুংরী মং মার্মা ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের বাসায় ককটেল নিক্ষেপ করে। ওই ঘটনায় চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবুল কালামকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৪ সালের ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার রাহাত্তারপুলের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আদর্শিক কারণে নাইক্ষ্যংছড়ির বহুল বিতর্কিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহম্মেদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে পরিচিত আলীকদমের এই চেয়ারম্যান।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, পাড়াবাসীর সংবর্ধনায় সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেছি, তারাও জড়িয়ে ধরেছেন, আমিও ধরেছি। এতে দোষের কিছু নেই।
শুধু সামাজিকভাবে নয়, খোদ নিজ দলেও গ্রুপিংসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত এই উপজেলা চেয়ারম্যানকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যের কারণে কেন্দ্রীয় বিএনপি বহিষ্কার করে। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার কারণে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবুল কালামকে গত ৩ মার্চ কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করা হয়।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কালামকে বহিষ্কার করা হয়। যে ছবিগুলো তিনি ফেসবুকে ছেড়েছেন তা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। জনপ্রতিনিধিসহ অন্য নেতাদের জন্যও তা লজ্জাকর।
এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুরে আলীকদম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ম্রো সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা এই শ্লীলতাহানির বিচারের দাবিতে ইউএনওর মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে স্বারকলিপি দেয়।
আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিক উল্লাহ জানান, বিষয়টি নিয়ে এখনও তরুণী বা কেউ অভিযোগ করেনি। তিনি আরো বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা আছে।
উল্লেখ্য, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবুল কালাম গত ১৮ মার্চ আলীকদম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের প্রার্থী জামাল উদ্দিন।
বা দা/ এফসি