
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। এরই অংশ হিসেবে পদ্মা সেতুর ১৩তম স্প্যান ৩বি স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) বসছে শুক্রবার (২৪ মে)।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে শুক্রবার সকালে ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে শুক্রবারই এই দুই পিলারের ওপর এই স্প্যানটি বসানো হবে।
এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে স্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে ১০টি স্প্যান এবং অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে দুটি স্প্যান। সে হিসেবে ৩বি স্প্যানটি স্থায়ীভাবে বসানো একাদশ স্প্যান হবে। এ স্প্যানটি বসানো হলে সেতুর মোট ১৯৫০ মিটার দৃশ্যমান হবে। জাজিরা প্রান্তে সেতুর ১৩৫০ মিটার ও মাওয়া প্রান্তের একটি স্থায়ী ও একটি অস্থায়ী স্প্যান মিলে মোট ৩০০ মিটার এবং সেতুর মাঝ বরাবর একটি স্প্যান অস্থায়ীভাবে বসানোয় সেতুর মোট ১৮০০ মিটার আগেই দৃশ্যমান রয়েছে। তবে, স্প্যানগুলো ভিন্ন ভিন্ন মডিউলে বসানোর কারণে দৃশ্যমান অংশগুলো এক সারিতে নয় বরং, বিচ্ছিন্নভাবে থাকবে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে পদ্মা সেতুর সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির আরো জানান, এর আগে কয়েক দফায় এই স্প্যানটি বাসানোর তারিখ পরিবর্তন করা হয়। পদ্মা নদীতে নাব্য সংকট এবং ১৪ নম্বর পিলারে লিফটিং হ্যাঙ্গার না বসাতে পারার কারণে স্প্যান ৩-বি পিলারের ওপর বসানোর শিডিউল পেছায় পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ।
মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার 'তিয়ান ই' ভাসমান ক্রেন ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রতিটি স্প্যান বহন করে। এরপর বসানো হয় পিলারের ওপর।
এদিকে, পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে একটি বৈঠকে পদ্মা সেতুর অগ্রগতির বিষয়টি জানানো হয়। বৈঠকে আরো জানানো হয় পদ্মা সেতুর অগ্রগতি ৭৬ শতাংশ, আর নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অগ্রগতি এখন ৬৭ শতাংশ। সেতুর মূল ২৬২টি পাইলের মধ্যে ২৩৬টি পাইল ড্রাইভিং শেষ হয়েছে। বাকি থাকা ২৬টি পাইল জুলাই মাসের মধ্যে শেষ হচ্ছে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে জানিয়েছেন এ প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।
এছাড়া মূল সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ২৫টি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে আরও ছয়টি পিলারের কাজ শেষ হবে। আর বাকি ১১টি পিলারের কাজ চলমান। মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ২৩টি স্প্যান ছিল। এর মধ্যে ১২টি স্পান পিলারের ওপর বসানো হয়েছে।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুতে বসানো হয় প্রথম স্প্যান। এর প্রায় চার মাস পর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে। এর দেড় মাস পর ১১ মার্চ জাজিরা প্রান্তে তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। এর ২ মাস পর ১৩ মে বসে চতুর্থ স্প্যান। এরপর এক মাস ১৬ দিনের মাথায় পঞ্চম স্প্যানটি বসে ২৯ জুন। ৬ মাস ২৫ দিনের মাথায় ২৩ জানুয়ারি বসে ষষ্ঠ স্প্যানটি। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারে বসে জাজিরা প্রান্তের সপ্তম স্প্যান। ২২ মার্চ বসে অষ্টম স্প্যান এবং মাওয়া প্রান্তে গত ১০ এপ্রিল বসে নবম স্প্যান। জাজিরা প্রান্তে মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে ২২ এপ্রিল স্থায়ীভাবে বসে দশম স্প্যান। গত ১৭ মে জাজিরা প্রান্তে ভায়াডাক্টে ২০ ও ২১ নম্বর পিয়ারে জে-৩ স্প্যানটি বসানোর কাজ শেষ হয়। এটি ছিল ১২ তম স্প্যান। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান।
কেএসটি