ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম ও নেত্রকোনার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢলের পানিতে জেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অনেক পরিবার। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো-
সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জে কয়েক দিনের ক্রমাগত বর্ষণের কারণে জেলার ১১টি উপজেলার অধিকাংশ নদ-নদীসমূহের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৪ সে. মি. পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন)বিকাল ৩টায় সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ৭:২৪ মি. রেকর্ড করা হয়েছে যা বিপদসীমা হতে ৪.০ সেমি উপরে জানিয়েছে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন র্বোড নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক ভূঁইয়া জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ জেলায় ১৫০.০০ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বর্তমানে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টায় নদীর পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। তবে সুনামগঞ্জ জেলায় কোথাও আগাম বন্যার কোন খবর পাওয়া যায়নি। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা আহবান করেন জেলা প্রশাসক। একই সাথে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা আহবানের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
জরুরি প্রয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে (ফোন নং-০৮৭১-৬১৩৭৫) এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে অবস্থানের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ।
কুড়িগ্রাম
ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ধরলা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৭৯ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭৪ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬০ সে.মি. ও চিলমারী পয়েন্টে ৫৯ সে.মি., কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ৩ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে দুধকুমারসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানিও।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদ-নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঠালবাড়ী ইউনিয়ের চর সারডোব গ্রামের ধরলা পাড়ের বাসিন্দা মজিবর রহমান জানান, গত দুই দিন থেকে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে নিম্নাঞ্চলের ঘর-বাড়িতে পানি প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ও ত্রাণ শাখা সূত্রে জানায়, বন্যা মোকামেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বৃহস্পতিবার বন্যা মোকাবেলায় আবারো প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নেত্রকোনা
তিন দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় নেত্রকোনার কলমাকান্দায় ১৫টি গ্রামের অন্তত তিন হাজার পরিবারের ঘর-বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে হান্নান মিয়া (২৩) নামের এক যুবক নিখোঁজ হবার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও শুক্রবার (২৮ জুন) সকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকালে তিনি তার বাড়ির পাশে গণেশ্বরী নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে বন্যার পানির স্রোতে নিখোঁজ হয়েছিলেন।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে কলমাকান্দার পাচগাঁও নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার সীমান্তবর্তী রংছাতি, খারনৈ ও লেংগুরা ইউনিয়নে অন্তত ১৫টি গ্রামের অন্তত তিন হাজার পরিবার বন্যার পানির কবলে পড়েছেন।
এ বন্যায় ভেঙেছে শতাধিক ঘর। বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ১০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা। ভেসে গেছে অর্ধশত পুকুরের চাষ করা মাছ। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানি বৃদ্ধি এখনো অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত উপজেলায় বৃষ্টি পাত হয়েছে ৭৫ মিলি লিটার। এভাবে পানি বাড়লে শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যেই নতুন করে কলমাকান্দা সদর, পোগলা, বড়কাপন, নাজিরপুর ও কৈলাটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের আরো অন্তত ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হতে পারে।
এরইমধ্যে বন্যাকবলিত গ্রামসমূহ হলো- রংছাতি ইউনিয়নের পাচগাঁও, ধারাপাড়া, নয়া চৈতাপাড়া, রামনাথপুর, নংক্লাই, কৃষ্টপুর, রায়পুর, নতুন বাজার, বারমারা, খারনৈ ইউনিয়নের সুন্দরীঘাট, বাউশাম, ভাষানকুড়া, লেংগুরা ইউনিয়নের চৈতা, লেংগুরা বাজার, ফুলবাড়ি, ঝিগাতলা ও শিবপুর।
পানিবন্দি ওই সব গ্রামের লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। তারা কেউ আছেন বাড়িতে মাচা বেঁধে। কেউবা আশ্রয় নিয়েছেন নিরাপদে থাকা স্বজনদের বাড়িতে। বন্য কবলিত অধিকাংশ পরিবার রয়েছে খাদ্য সংকটে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর খোঁজ-খবর না নেওয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
বন্যায় ক্ষতি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, তিনিসহ স্থানীয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক তালুকদার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এরইমধ্যে ১৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
কেএসটি