• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০১৯, ০৯:০৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১, ২০১৯, ০৯:০৮ এএম

পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে ভেসে গেছে ১৬২ কোটি টাকার মাছ 

পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে ভেসে গেছে ১৬২ কোটি টাকার মাছ 

গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সদর, বিশ্বম্ভরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার ৩৩৮টি পুকুরের মাছ ও পোনা, রেনু ভেসে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চার শতাধিক মৎস্য খামারি। পুকুরের পাড় উপচে বানের পানি প্রবেশ করায় চাষ করা মাছ পুকুরের চারপাশে নেট দিয়েও আটকে রাখতে পারেনি তারা। এতে তিনটি উপজেলায় ১ কোটি ৬১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় জেলা মৎস্য অফিস। 

সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে নদীর পানি বেড়ে তিনটি উপজেলার পুকুরগুলো প্লাবিত হয়ে মাছ ভাসিয়ে নিয়ে যায়। পানির চাপে পুকুরের পাড় উপচে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ভেসে যায় ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার মাছ, মাছের পোনা, রেনু। তিনটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মাছ চাষিরা। শুক্রবার সকাল থেকে বিকেলের মধ্যে হাওর ও নদী পানি বেড়ে গিয়ে খামারিদের চাষ করা মাছ ঢলের পানিতে ভেসে যায়। হাজার হাজার টাকা খরচ করে মাছ চাষ করে খামারিরা এখন নিঃস্ব। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ও ধনপুর ইউনিয়নের মাছ চাষিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। 

জেলা মৎস্য বিভাগের হিসেব মতে. বিশ্বম্ভরপুরে ২৫০টি, সদরে ১১৭টি ও দোয়ারবাজারে ৩১টি পুকুরের ৫৭ টন মাছ, ৪৩ লাখ পোনা, ভেসে যাওয়া মাছের বাজারদর ১শ ১২ কোটি টাকা পোনার মূল্য ৩১ লাখ টাকা, অবকাঠামোগত ক্ষতি ১৭ লাখ টাকা।   
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের চালবন গ্রামের মাছ চাষি হেলাল মিয়া বলেন, হঠাৎ করে পানি এসে তার পুকুরের ত্রিশ হাজার টাকার রুই, মৃগেল, গ্রাসকার্প সিলভারকার্প মাছ ভাসিয়ে নিয়ে যায়। পানির প্রবল চাপে পুকুরের পাড়ও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

ফারুক মিয়া বলেন, সলুকাবাদ ইউনিয়নের দেড় শতাধিক পুকুরের মাছ ঢলের পানিতে ভেসে গেছে। প্রতিটি পুকুরে গড়ে লাখ টাকার মাছ ছিল।  

জগন্নাথপুর গ্রামের শহীদ মিয়া বলেন, মাত্র ১৫ দিন আগে পুকুরে ৫ হাজার টাকার বিভিন্ন জাতের পোনা মাছ ছেড়ে ছিলেন। কিন্তু এখন পুকুরে আর কোন মাছ নেই সব মাছ ঢলের পানিতে ভেসে গেছে। 

পলাশ ইউনিয়নের তালেরতল গ্রামের হারিছ মিয়া বলেন, এভাবে পানি আসবে তিনি তা ভাবতে পারেননি। শুক্রবারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তার পুকুরের সব মাছ পানিতে ভেসে যায়। 

মৎস্য চাষি রোকসানা আক্তার ফাতেমা বলেন, এনজিও থেকে ঋণ করে বাড়ির পাশের পুকুরে মাছ চাষ করে ছিলেন। মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করার কথা ছিল এখন পুকুরের মাছ ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ায় খুব চিন্তায় আছেন তিনি। 

ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার বিকেলের মধ্যে পুকুরের পাড় উপচে ঢলের পানি প্রবেশ করে পুকুরের মাছ ভেসে যায়। 

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ধনপুর ইউনয়িনের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এলাকার মৎস্য চাষিরা সরকারের সহযোগিতা না পেশে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না। হঠাৎ বন্যায় এলাকার দুই শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। 

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ভুইয়া বলেন, তার উপজেলায় ২২০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে এতে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ্যকে পাঠানো হয়েছে। সরকারের কোন সহযোগিতা আসলে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল হক বলেন, সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার মাছ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ও ধনপুর ইউনিয়নের মৎস্য চাষিদের। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমীর বিশ্বাস বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য খামারিদের তালিকা তৈরি করে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। সদর বিশ্বম্ভরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৫১ হেক্টর আয়তনের পুকুর ও দীঘির মাছ পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভেসে গেছে।

কেএসটি