দেরিতে হলেও মঙ্গলবার (২ জুলাই) দিবাগত রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে ফিরে এসেছে বর্ষার রূপ। এতে সমতল এলাকায় কিছুটা স্বস্তি বিরাজ করলেও আতঙ্ক-শঙ্কায় সময় অতিবাহিত করছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩২ ক্যাম্পের ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এদিকে সীমান্তের তুমব্রু নো-ম্যান্স ল্যান্ডের রোহিঙ্গা ক্যাম্পটি বৃষ্টি ও খাল দিয়ে বেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মাস্টার মহিবুল্লাহ জানান, উখিয়া-টেকনাফের প্রায় ৩২টি ক্যাম্পে অস্থায়ীভাবে বাস করছে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে আসা ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা, যাদের বেশির ভাগই পাদদেশ থেকে থরে থরে পাহাড়ের টিলায় ঝুপড়ি করে রয়েছে। ফলে অতিবর্ষণ হলেই পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দেয়। টানা বর্ষণের কারণে গত দুই দিনে উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়ে বাঁশ ও পলিথিনে তৈরি অনেক ঝুপড়ি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
এছাড়া টানা বৃষ্টিতে কাদা ও পয়োঃনিষ্কাশনের ময়লা পানি চলাচলের পথে এসে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে রোহিঙ্গাদের। অতিরোদে টেম্পার নষ্ট হওয়া ত্রিপলের ছাউনি গলে পানি পড়ছে অধিকাংশ ঘরে। ঝোড়ো হাওয়ায় অনেক ক্যাম্পের ঝুপড়ি উড়িয়ে নেওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় রোহিঙ্গারা আতঙ্কে রয়েছে। বুধবার (৩ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে কুতুপালং ময়নার ঘোনা ক্যাম্পে পাহাড়ের একটি অংশ ভেঙে পড়েছে। এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে পাহাড়ধসের।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা হতে বুধবার রাত ১২টা ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে কক্সাবজারে। চলমান বর্ষা মৌসুমের শুরু হতে এটিই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও হালকা থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
উখিয়ার ১৭ নং ক্যাম্পের মো. ইউনুস বলেন, ঘরে পানি ঢোকায় পরিবারের সবাইকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। সবাই বলাবলি করছে বৃষ্টি বাড়লে পাহাড় ধসে পড়তে পারে।
বালুখালী ৯ নং ক্যাম্পের মাঝি সাব্বির আহামদ জানান, পাহাড়ে বৃষ্টি হলে মুহূর্তে তলিয়ে যায় চলাচলের পথ। এ সময় ঘর থেকে বের হওয়া সবার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় ক্যাম্পের মসজিদের মাইকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সীমান্তের তুমব্রু কোনারপাড়া নো-ম্যান্স ল্যান্ড ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ জানান, প্রবল বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢলে তুমব্রু কোনারপাড়া রোহিঙ্গা শিবির তলিয়ে গেছে। ফলে রোহিঙ্গারা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। তিনি আরও জানান, কিছু উঁচু মাচাং ও উঁচু জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্লাবিত লোকজন মানবেতর জীবন যাপন করছে। পাহাড়ি ঢল এখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বর্তমানে বৃষ্টি কমেছে। তুমব্রু সীমান্ত খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে বাধা পাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান স্থানীয় লোকজন ও রোহিঙ্গারা।
পাশাপাশি প্লাবিত হয়েছে সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু কোনারপাড়া, বাজার ড়া, মধ্যমপাড়ার বেশ কিছু ঘরবাড়ি। ঘুমধুম ইউপির চেয়ারম্যান এ কে জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, প্রবল বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢলে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পটি তলিয়ে গেছে। এতে প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া সীমান্তের তুমব্রু খালে মিয়ানমার ব্রিজ নির্মাণ করে নিচে নেট তৈরি করায় পানি চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়ে তুমব্রু বাজারসহ বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘যেকোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছি আমরা।’ কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে শিবিরের অনেক ঝুপড়ি ঘরে পানি ঢুকেছে বলে খবর পেয়েছি। ভারী বর্ষণে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশের ঝুঁকিপূর্ণ বসতির রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, দুর্যোগ ক্ষতি এড়াতে আমরা তৎপর রয়েছি।
এনআই