• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০১৯, ১০:২৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৮, ২০১৯, ১২:৩৮ পিএম

বরিশালে বাড়ছে ধর্ষণের অভিযোগ, মিলছে না প্রমাণ!

বরিশালে বাড়ছে ধর্ষণের অভিযোগ, মিলছে না প্রমাণ!

সাম্প্রতিক সময়ে বরিশালে ধর্ষণের অভিযোগ বেড়েছে। প্রায় প্রতি মাসেই ধর্ষণের অভিযোগকারী ২৫ থেকে ৩০ জন ভিক্টিমের মেডিকেল পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু এসব অভিযোগকারীর বেশিরভাগ ধর্ষণের প্রমাণ মিলছে না। গত ৬ মাস ৭ দিনে ১৬০ জন ভিকটিমের মধ্যে মাত্র ৩০ ভাগ ভিকটিমের ধর্ষণের আলামত পেয়েছে ফরেনসিক বিভাগ।

যার মধ্যে ১৮ বছরের নিচে শিশু ও কিশোরীর ধর্ষণের আলামত মিলেছে ৬০ ভাগ। বাকি ৪০ ভাগের মধ্যে ১৯ থেকে ২৮ বছর বয়সী অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে মিলেছে ৩৫ ভাগ ও বাকি ৫ ভাগ ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে নারী।

ধর্ষণের পরে আলামত নষ্ট করা এবং ধর্ষণের পরীক্ষা করতে বিলম্বের কারণেই ধর্ষণের প্রমাণও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবামেক) এর ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্রমতে, দেশব্যাপী ধর্ষণ এবং যৌন নীপিড়নের ঘটনা বেড়ে গেছে। এর থেকে পিছিয়ে নেই বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চল। এসব ঘটনায় স্থানীয় থাকা এবং আদালতে মামলা হচ্ছে। যার মধ্যে থেকে চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত বরিশাল জেলা ও মহানগর সহ বিভাগের ৬ জেলার ১৬০ জন ভিকটিমের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে শেবামেকের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ। এর মধ্যে চলতি মাসের গত ৭ দিনে ৭ জন ভিকটিমের মেডিকেল টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে।

এদের মধ্যে ১২২ জন বরিশাল জেলার, ২২ জন বরগুনার এবং ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি থেকে এসেছে ৪ জন করে মোট ১৬ জন। তার আগে ২০১৮ সালে এ বিভাগে মোট ২৪২ জন ভিকটিমের ধর্ষণের পরীক্ষা হয়।

ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের গত ছয় মাসের মধ্যে মে মাসে সর্বোচ্চ ৩৯ জন ভিকটিমের শারীরিক পরীক্ষা হয়েছে। আর এ পর্যন্ত সর্বনিম্ন ১৬ জনের পরীক্ষা হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে। এর বাইরে জানুয়ারি মাসে ১৭ জন, মার্চ মাসে ২৫ জন, এপ্রিল মাসে ২৬ জন এবং জুন মাসে ধর্ষণের অভিযোগকারী ৩০ জনের মেডিকেল টেস্ট হয়েছে।

বরিশাল জেলায় যে ১২২ জনের ধর্ষণের পরীক্ষা করা হয়েছে তার মধ্যে বরিশাল মহানগরীর চার থানা এলাকার ৩৯ জন, গৌরনদী থেকে ২২ জন, বাকেরগঞ্জ থেকে ১২ জন, হিজলা থেকে ৯ জন, মুলাদী থেকে ৭ জন, বাবুগঞ্জ থেকে ৪ জন, উজিরপুর থেকে ৯ জন, বানারীপাড়া থেকে ৭ জন, আগৈলঝাড়া থেকে ৬ জন ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ৭ জন।

ফরেনসিক বিভাগ সূত্র জানায়, ধর্ষণের অভিযোগ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা ভিকটিমের মধ্যে ১৮ বছরের নীচে শিশু-কিশোরীর সংখ্যাই বেশি। তাছাড়া এখন পর্যন্ত যে ১৬০ জনের পরীক্ষা হয়েছে তার মধ্যে ৫৯ জন ভিকটিম বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) এর মাধ্যমে শারীরিক পরীক্ষা করিয়েছে।

ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. এবিএম নাজমুল হুদা বলেন, মূলত দুটি পদ্ধতিতে পরীক্ষা করেই বলে দেয়া সম্ভব ভিকটিম ধর্ষিত হয়েছে কি না। তারপরেও অধিকতর পরীক্ষা সুযোগ রয়েছে। তবে পরীক্ষা পরে ধর্ষণের অভিযোগকারী অধিকাংশ ভিকটিমের ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না।

তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষণের পরীক্ষা করা হলে সেটার আলামত সঠিকভাবে পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে যারা পরীক্ষার জন্য আসছে তাদের বেশিরভাগ ২৪ ঘণ্টার পরে আসছে। কোন কোন ভিকটিমকে এক থেকে দুই সপ্তাহ পরেও নিয়ে আসা হয়। ততদিনে ধর্ষণের আলামত নষ্ট হয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, ধর্ষণের পরে নানা কারণে আলামত নষ্ট হতে পারে। যার মধ্যে ধর্ষণের পরে গোসল করা এবং আলাতমত হিসেবে থাকা কাপড় ধুয়ে ফেলা অন্যতম কারণ। এসব কারণে পরীক্ষায় আলামত পাওয়া যায় না। এতে করে ভিকটিমের আইনি সহায়তা এবং বিচার পেতেও বেগ পেতে হয়।

ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) ডা. মো. আক্তারুজ্জামান তালুকদার বলেন, ধর্ষণের আলামত না পাওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ থাকতে পারে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় কেউ কাউকে ফাঁসাতে চাইলে ধর্ষণের অভিযোগ খুব সহজ ভাবে ব্যবহার করা যায়। এসব ক্ষেত্রে পরীক্ষা করা হলে আলামত পাওয়া যায় না। কোন কোন ক্ষেত্রে ভিকটিম পরীক্ষা করাতে রাজিও হয় না।

ধর্ষণের অপরাধের বিষয়ে নিজের অভিমত ব্যক্ত করে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, যৌন নির্যাতন বা হয়রানীর আইন আরো কঠোর হওয়া উচিত। পাশাপাশি এ আইনের কঠোর প্রয়োগ হলে ধর্ষণ, যৌন নীপিড়নের মত জঘণ্য অপরাধ কমে যাবে। এজন্য শুধু আইনের প্রয়োগ নয়, বরং পারিবারিক এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করাটাও জরুরি বলে মনে করেন তিনি।


টিএফ

আরও পড়ুন