চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডেপুটেশনের ডাক্তার দিয়ে কোনো রকমে চালানো হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ২১ জনের জায়গায় ১৫ জন চিকিৎসক রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। রোগীর চাপ সামাল দিতে ডেপুটেশনে ডাক্তার এনে চালানো হচ্ছে হাসপাতাল।
জানা গেছে, ১৯৭০ সালে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। সে সময় জনসংখ্যা কম থাকায় চিকিৎসা সেবা দিতে বেগ পেতে হয়নি এ হাসপাতালটির। তবে, সময়ের সাথে সাথে জনসংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাওয়ায় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রোগীর সংখ্যাও।
২০০৩ সালে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নতি করা হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালকে। তবে, ডাক্তার ও নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। তাই ১০০ শয্যার হাসপাতালটি আজো ৫০ শয্যার জনবলেই চলচ্ছে।
পরবর্তীতে ২০১০ সালে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালকে ২৫০ শয্যা হাসপাতালে উন্নিতকরণের জন্য ১৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০১৮ সালের অক্টোবরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় জনবল সংকট নিয়েই নতুন ভবনসহ ২৫০ শয্যার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের উদ্বোধন করেন সাবেক মন্ত্রী নাসিম।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা ও পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার সরকারি হাসপাতালের মধ্যে প্রথম এবং সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে অর্জন করেছে তৃতীয় স্থান। যে কারণে হাসপাতালে প্রতিনিয়তই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ৮’শ এর অধিক এবং সার্বক্ষণিক হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩‘শ এর অধিক। ৫০ শয্যার ডাক্তার দিয়ে এত বেশি রোগীর সুচিকিৎসা প্রদান করতে ডাক্তাররা যেন হিমশিম খাচ্ছেন।
হাসপাতালে একাধিক রোগী ও তার স্বজনেরা জানান, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বেড না থাকায় হাসপাতালের মেঝে, সিড়ির পাশে ও টয়লেটের পাশে বিছানা পেতে থাকতে হয় রোগীদের। রোগীর ভিড়ে রোগীরাই যেন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। হাসপাতালের বারান্দাতেও গায়ের সঙ্গে গা ঘেষে থাকতে হচ্ছে তাদের। হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত নার্স, নেই রোগী সেবা দেয়ার মতো পর্যাপ্ত ডাক্তার। তাই রোগীরা পাচ্ছে না তাদের পরিপূর্ণ সেবা।
হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স রোমানা সুলতানা জানান, ওয়ার্ডে যত রোগী থাকার কথা, তার থেকে চার-পাঁচ গুণ রোগী বেশি থাকাই আমাদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম পেতে হচ্ছে। ওয়ার্ডের মেঝেতেও রোগীতে পূর্ণ। এক রোগীকে সেবা দিয়ে অন্য রোগীর নিকট পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শামীম কবির জানান, চুয়াডাঙ্গার জেলাবাসীর উন্নত চিকিৎসার একমাত্র ভরসা এই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল। প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৭০০/৮০০ এর বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসে এবং ১৫০ থেকে ২০০ রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি হয়। যার কারণে এ বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং জায়গা দেয়া ১০০ শয্যার ভবনে আর সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া ৫০ শয্যার ডাক্তার দিয়ে এত বেশি রোগীর সুচিকিৎসা প্রদান করতে ডাক্তারদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চুয়াডাঙ্গা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করে জেলার মানুষের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম জানান, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এখনও ৫০ শয্যা হাসপাতাল হিসেবেই ব্যবহার করা হচ্ছে। ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল রূপে সেবা প্রদান করা হলেও এটি এখনও ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়নি। চেষ্টা করছি, হয়তো অচিরেই ১০০ শয্যার অনুমতি পাব। ১০০ শয্যার অনুমতি না পেলে ২৫০ শয্যার অনুমতিও পাওয়া যাবে না।
টিএফ