সারা দেশের ন্যায় বরিশালেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে। চলতি মাসের গত ৫ দিনে ডেঙ্গু জ্বরে ৮ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যারা সবাই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।
এদিকে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকলেও তাদের চিকিৎসায় নেয়া হয়নি বিশেষ কোন ব্যবস্থা। শেবাচিম হাসপাতালে জায়গা সংকটের অজুহাতে সাধারণ রোগীদের সাথেই দেয়া হচ্ছে তাদের চিকিৎসা সেবা। এর ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সাধারণ মহল।
তাবে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে মশক নিধন কার্যক্রমে জোর দিয়েছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে টিম ওয়ার্ডের মাধ্যমে মশক নিধন কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা। প্রতিদিন হ্যান্ড স্প্রে ও ফগার মেশিনের সাহায্যে মশক নিধন ওষুধ প্রয়োগ করছে তারা।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, গত ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৮ জন রোগীর খোঁজ পেয়েছেন তারা। যারা সবাই বরিশালের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। রয়েছেন একজন চিকিৎসকও। এরা সবাই শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন।
এর মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বরিশাল সদর উপজেলার কাউনিয়া থানাধীন দক্ষিণ লামছড়ির মোস্তফা সাদেক এর ছেলে মো. মেজবাহ উদ্দিন (২২), পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের গৌরঙ্গসুতরের ছেলে তরুন সুতর (২৮), বাকেরগঞ্জের পাদ্রীশিবপুর গ্রামের মুজাহিদ ইসলামের ছেলে আরিফুল ইসলাম (৪৮) ও বরিশাল নার্সিং কলেজের ইন্সটাক্টর মো. আলী আজগর এর ছেলে আফনান আশরাফি (২০) গত ১৬ জুলাই বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হয়।
এছাড়া ১৯ জুলাই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হন গৌরনদীর কম্বলপুর গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে ফোরকান (১৯) ও বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর গ্রামের বজলু হাওলাদারের ছেলে গিয়াস উদ্দিন (৩০)।
সর্বশেষ গত ২১ জুলাই ডেঙ্গু আক্রান্ত আরো ২ জন শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হয়। এরা হলেন- বরিশাল সদর উপজেলার কঠুরাকাঠি গ্রামের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম (২৩) ও বরিশাল নগরীর কলেজ এভিনিউ এলাকার মোয়াজ্জেম রুবেল (২৭)।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, অনেক রোগীই ডেঙ্গু জ্বরের ধরন নিয়ে এ হাসপাতালে আসছে। তবে পরীক্ষা নিরীক্ষায় তাদের সবার ডেঙ্গু ধরা পড়ছে না। আমরা এ পর্যন্ত ৮ জনের ডেঙ্গু নিশ্চিত হতে পেরেছি। এদের মধ্যে একজন ঢাকা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরিশালে আসে। এদের সকলকেই শেবাচিমে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে একজন চিকিৎসা সম্পন্ন করে বাড়ি ফিরেছে।
ডা. বাকির হোসেন বলেন, শেবাচিমে ডেঙ্গু রোগীদের আলাদাভাবে চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ নেই। কেননা এখানে জায়গার বড়ই অভাব। তাই মেডিসিন ওয়ার্ডের মধ্যেই অন্যান্য রোগের সাথে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। অবশ্য ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সার্বক্ষণিক মশারির মধ্যে রাখা হচ্ছে।
বরিশালে এখনো ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেনি জানিয়ে শেবাচিম হাসপাতাল পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, মূলত মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। তবে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। জ্বর ও গাঁ ব্যথা দেখা দিলে আতঙ্কিত হয়ে সরাসরি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য আহবান জানিয়েছেন তিনি।
অপরদিকে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন বাবলু বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধ নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রমে গুরুত্ব বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ৩০টি ওয়ার্ডে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি মশক নিধন ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। ১৫ জন কর্মী প্রতিদিন হ্যান্ড স্প্রে নিয়ে মশক নিধনের ওষুধ প্রয়োগ করছে।
পাশাপাশি ৪টি পৃথক টিম করা হয়েছে। এরা নগরীর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বস্তি এলাকা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পৃথকভাবে স্প্রে করে মশক নিধোণের ওষুধ দিচ্ছে। তবে সিটি কর্পোরেশনের ফগার মেশিনের সংকট রয়েছে। তার পরেও একটি ফগার মেশিন দিয়ে নগরীর জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মশার ওষুধ দেয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতার কাজে প্রায় সাড়ে ৪শ কর্মী নিয়োজিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনসংগযোগ কর্মকর্তা।
কেএসটি