ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় কোন প্রকার ক্ষতিকর ট্যাবলেট ও ইনজেকশন ছাড়াই সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটা তাজাকরণ করা হচ্ছে।
কোরবানি ঈদ যতই এগিয়ে আসছে ততই যেন স্থানীয় খামারি ও কৃষকরা দিন রাত গরুর পরিচর্যা নিয়ে এক প্রকার ব্যস্ত হয়ে উঠছেন। প্রতি বছর ঈদে দেশীয় গরু চাহিদা ভাল থাকায় খামারিদের পাশাপশি পারিবারিকভাবে লালন পালন করছেন কৃষকরাও।
এদিকে, কোরবানির পশু নিয়ে যতটা প্রত্যাশা খামারিদের আছে তার চেয়ে বেশি আশঙ্কাও রয়েছে ভারতীয় গরু নিয়ে। যদি ভারতীয় গরু বাজারে আসলে তাহলে দেশীয় গরু বিক্রিতে লোকসান গুনতে হবে।
এরইমধ্যে স্থানীয় বাজারগুলোতে গরু আসতে শুরু করলেও কেনা বেচা সেইভাবে শুরু হয়নি। ঈদের আগ মুহুর্তে বাজার জমজমাট হবে বলে জানিয়েছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরসহ ৫টি ইউনিয়নে ৫০১টি খামারসহ পারিবারিকভাবে কৃষক তাদের বাড়িতে মোটাতাজাকরণসহ ৮ হাজারের ওপর কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করছেন। এরমধ্যে গরু ৬৬৬০ মহিষ ৮৮৯ ও ছাগল ১৭১৮টি লালন পালন করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের ধাতুর পহেলা গ্রামের খামার মালিক মো. মাহফুজ মিয়া জানায়, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে গত ৭ বছর ধরে এ গরু লালন পালন করে বিক্রি করা হয়।
গত ৮ মাস পূর্বে বড় সাইজের ২২টি গরু ক্রয় করে বাড়িতে লালন পালন করা হয়। ইতিমধ্যে ৪টি গরু বিক্রি হয়েছে। বিক্রিতে ভাল লাভ হয়েছে বলে জানায়।
তিনি আরও বলেন, এ বছর গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গরু লালন পালনে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তাছাড়া ক্ষতিকারক মোটা তাজাকরণ ইনজেকশন ছাড়াই দেশীয় বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়। শেষ মুহুর্তে যদি ভারতীয় গরু বাজারে আসে তাহলে অনেক লোকসান গুনতে হবে। গত বছর ২৪টি গরু বিক্রি করে খরচ বাদে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় হয়।
মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, কোরবানির ঈদে বিক্রি করতে ১২টি গরু দেশীয় পদ্ধতিতে লালন পালন করছেন। গরুগুলোকে ঘাস খরের পাশাপাশি খৈল ভূষি খাওয়ানো হচ্ছে। গত বছর ১৫টি গরুর মধ্যে ১১টি গরু বিক্রিতে প্রায় ৭০ হাজার টাকা লাভ হয়। বাকি ৪টি গরু বিক্রি হয়নি। ওইগুলোসহ এখন ১২টি গরু রয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে বাজারে বিক্রির জন্য নেওয়া হবে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খামারি ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খামারগুলোর উদ্দেশ্য হলো ঈদকে সামনে রেখে মূলত গরুকে মোটাতাজা করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করতে ও সুস্থ রাখতে খড়, তাজা ঘাস, খৈল ভূষিসহ পুষ্টিকর খাবার মাধ্যমে দেশীয় জাতের গরুই বেশি লালন পালন করছেন বলে একাধিক কৃষক ও খামারির মালিকরা জানায়।
আখাউড়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের ভোটেরিনারি সার্জন ডা. কামাল বাশার বলেন, এ উপজেলার কৃষক ও খামারিরা দেশীয় পদ্ধতিতে যত্ন নিয়ে গরু লালন পালন করছে। পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা খামারগুলোতে পর্যবেক্ষক করা হচ্ছে। খামারিদেরকে ক্ষতিকারক ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে কেউ যদি গোপনে এই অসাধু প্রক্রিয়া করে থাকে তাহলে অবশ্যই পশুখাদ্য আইনে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেএসটি