• ঢাকা
  • বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০১৯, ০৬:৩৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৩, ২০১৯, ০৬:৩৭ পিএম

বিলুপ্তির পথে মিরকাদিমের ঐতিহ্যবাহী গরু

বিলুপ্তির পথে মিরকাদিমের ঐতিহ্যবাহী গরু
শৌখিন ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে মিরকাদিমের ঐতিহ্যবাহী সাদা গরু  -  ছবি : জাগরণ

কোরবানির পশু হিসেবে মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমের গরুর বেশ সুনাম রয়েছে। এর মধ্যে ধবল বা সাদা গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু ক্রমাগত লোকসান ও গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকে গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

প্রতিবছর গরু মোটাতাজাকরণ খামারের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে। আগে মিরকাদিম এলাকায় হাজার হাজার গরু মোটতাজা করার কাজ চলত। বর্তমানে তা কমে অর্ধশত হবে, বলতে গেলে মিরকাদিমের গরু বিলুপ্তির পথে।

বিশেষত, যারা শৌখিন মানুষ, তারা দর্শনীয় গরু কোরবানি দেন। এ সময় মিরকাদিমের উন্নতমানের গরুর জন্য তাদের আনাগোনা এ অঞ্চলে দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উৎকৃষ্ট মানের গরু কিনতে আসেন বিত্তশালী ও ব্যবসায়ীরা।

প্রাচীনকাল থেকেই মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমের বুট্টি গরু, বাঁজা গাভির জন্য বিখ্যাত। এ ছাড়া এখানে পাওয়া যেত নেপালি, মণ্ডি, হাঁসা, পশ্চিমা ও সিন্ধি জাতের গরু। একসময় মিরকাদিমের প্রতিটি ঘরে এসব বিশেষ জাতের গরু লালন-পালন হতো। এখন কোনো খামারির কাছেই পাঁচ-ছয়টির বেশি গরু নেই। এখানে ছিল তেলের ঘানি বা ধান-চালের মিল। খুব সস্তায় খইল, ভুষি, খুদ, কুড়া ইত্যাদি পাওয়া যেত।

এখন চালের মিল থাকলেও খইল, ভুষি, কুড়ার দাম খুব চড়া। তাই গরু মোটাতাজা করার হার অনেক কমে গেছে। ১০-১২টি পরিবার এই পেশা ধরে রেখেছে। এছাড়া গৃহস্থ পরিবারগুলোর সদস্যদের অধিকাংশই বিদেশে চলে যাওয়ায় এবং অন্য পেশায় জড়িত হয়ে পড়ায় গরু পালন কমে এসেছে।

বিশেষ পালন কৌশলের কারণে এসব গরুর গোশত সুস্বাদু হয়। ট্যাবলেট খাইয়ে বা ইনজেকশন দিয়ে কৃত্রিমভাবে এখানকার গরুগুলো স্বাস্থ্যবান করা হয় না। সাধারণত খইল, ভুষি, খুদ ইত্যাদি খাওয়ানো হয় এবং নিজের সন্তানের মতো যত্ন নেন গরু পালনকারীরা। তাই এর দাম ও চাহিদাও বেশি।

পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জসহ বড় বড় হাটগুলোতে এসব গরুর দেখা মেলে। তবে গত কয়েক বছর ধরে পুরান ঢাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা ঈদের কয়েক মাস আগেই মিরকাদিমে চলে যান গরু কিনতে। তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু পছন্দ করে কিনে ফেলেন এবং গৃহস্থদেরই ঈদ পর্যন্ত গরু পালনের দায়িত্ব ও খরচ দিয়ে আসেন। ফলে কোরবানির হাটে ওঠার আগেই অনেক গরু বিক্রি হয়ে যায়। তবে এখনো পুরান ঢাকার নামীদামি পরিবারগুলো মিরকাদিমের গরু কোরবানিকে তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য মনে করে। মিরকাদিমের গরুর মাংস বিশেষ সাধের হওয়ায় বহু মানুষ এ গরু নিতে আসেন শখের বশে।

গরু পালনকারীরা মো. আক্তার হোসেন জানান, মিরকাদিমের গরুর চাহিদা অনেক। কোরবানি ঈদের ছয়-সাত মাস আগে থেকে তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোট ও বাছাই করা গরু কিনে নিয়ে আসেন। বিশেষ করে বাঁজা গাভি, খাটো জাতের বুট্টি গরু, নেপালি, সিন্ধি জাতের গরু আনা হয়। তবে এ গরুগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে, এগুলোর বেশির ভাগের গায়ের রং সাদা ও নিখাদ হয়। এতে প্রতিটি গরু কিনতে দাম পড়ে ৮০-৯০ হাজার টাকা। মোটাতাজা করতে খরচ পড়ে ৪০-৫০ হাজার টাকা। বিক্রেতাদের দাবি, একটি গরুর পেছনে অনেক টাকা খরচ হয়। যত্ন নিতে হয় অনেক বেশি। ফলে এখন বিক্রি করেও তেমন লাভবান হওয়া যায় না। তবে ঐতিহ্য ধরে রাখতে বাপ-দাদার এ ব্যবসায় আমরা কিছু লোক কোনোমতে টিকে আছি।

বর্তমানে গরু মোটাতাজাকরণে প্রচুর লোকসান হয়। গো-খাদ্যের দাম মানুষের খাদ্যের চেয়ে অনেক বেশি। ক্রমাগত লোকসান ও আর্থিক অসংগতির কারণে এ ব্যবসা ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। একসময় আর কাউকে পাওয়া যাবে না মিরকাদিমে গরু মোটাতাজাকরণ কাজে।

এনআই

আরও পড়ুন