বরিশাল নগরীতে এক আশ্রিতা তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পরে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় তরুণীর সঙ্গে আশ্রয়দাতার আপত্তিকর ছবি ধারণ ও জিম্মি করে ঘরের মালামাল লুট করে স্থানীয় একটি মাদক ব্যবসায়ী গ্যাং।
বুধবার (২১ আগস্ট) দিবাগত রাত ১১টার দিকে বরিশাল নগরীর সিএন্ডবি সড়কের ১ নম্বর পুল সংলগ্ন ইসলামপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর পরই স্থানীয়দের সহযোগিতায় গ্যাংয়ের ফরিদ জমাদ্দার (২২) নামের এক সদস্যকে আটক করে কোতয়ালী মডেল থান পুলিশ।
তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছাবার আগেই ধর্ষণের শিকার আশ্রিতাকে নিয়ে পালিয়ে গেছে গ্যাং সদস্য অন্য চার জন। আটককৃত ফরিদ জমাদ্দার বরগুনার তালতলী উপজেলার শোনাউটা গ্রামের ইব্রাহিম জমাদ্দারের ছেলে। সে ইসলামপাড়া এলাকায় বোনের বাসায় থাকতো।
এছাড়া পলাতকরা হলো- গ্যাংয়ের প্রধান ইসলামপাড়া এলাকার বাসিন্দা বাবুল মহুরীর ছেলে জুয়েল, তার সহযোগী একই এলাকার বাসিন্দা শুভ, মাহবুব ও বিষ কবিরের ছেলে আল আমিন। এদের মধ্যে জুয়েল, শুভ ও মাহাবুব তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেছে বলে দাবি আটককৃত ফরিদের।
তরুণীর আশ্রয়দাতা স্থানীয় একটি কলেজের নৈশ প্রহরী জুয়েল মল্লিকের স্ত্রী লাকি আক্তার জানান, গত পাঁচ দিন আগে নগরীর ফলপট্টিতে পরিচয় হয় ঢাকা থেকে আসা এক তরুণীর। পরিচয় থেকে লাকিকে বোন ডাকে ওই তরুণী। সেই সুবাদে বরিশালে কেউ পরিচিত না থাকায় তরুণীকে নিজ বাসায় আশ্রয় দেন লাকি ও জুয়েল মল্লিক দম্পতি।
লাকির স্বামী জুয়েল মল্লিক জানান, ওই তরুণী গত ৬ দিন ধরে তাদের ভাড়া বাসায় রাতযাপন করে দিনে তার কাজে চলে যায়। প্রতিদিনের ন্যায় বুধবারও দুপুরের খাওয়া দাওয়াশেষে বাসা থেকে বের হয়। রাতে ইসলামপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাদক ব্যবসায়ী গ্যাংয়ের প্রধান জুয়েল ও তার সহযোগীরা কৌশলে আশ্রিতা তরুণীকে ফোন করে জুয়েল মল্লিকের বাসায় ডেকে আনে।
জুয়েল মল্লিক অভিযোগ করেন, গ্যাংয়ের সদস্যরা তরুণীকে বাসায় ডেকে এনে আপত্তিকর প্রস্তাব দেয়। এতে প্রতিবাদ করায় তারা আমাকে মারধর করে একটি কক্ষে আটকে তাকে ও তরুণীকে উলঙ্গ করে মোবাইলে ক্যামেরা ভিডিও এবং ছবি ধারণ করে।
এর পর তরুণীকে মুখ বেঁধে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও পরে ঘরের মালামাল সহ আশ্রিতাকে অপহরণ করে। খবর পেয়ে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এসময় গ্যাংয়ের সদস্য ফরিদকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আটক করেন তারা।
তবে আটককৃত ফরিদ জানান, আশ্রিতা ওই তরুণীকে দিয়ে নিজ ঘরে অবৈধ ব্যবসা করে আসছিলো জুয়েল মল্লিক ও তার স্ত্রী লাকি। তাছাড়া তরুণীকে কেউ ডেকে আনেনি, সে ওই বাসায় ছিলো। আশ্রয়দাতা জুয়েল মল্লিকের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় তাকে ধরে ফেলে।
এসময় ওই অবস্থায় দু’জনের আপত্তিকর ছবি মোবাইলে ধারণ ও তিনজন তিনজন মিলে তরুণীকে ধর্ষণ করে। এরপর তরুণীকে নিয়ে তিনজন ঘর থেকে বের হয়ে চলে যায় এবং পরে তরুণী নিজের মত করে কোথাও চলে গেছে। তাকে কেউ অপহরণ এবং আটককৃত ফরিদ ও পলাতক আল আমিন ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন বলেও দাবি ফরিদের।
কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদ জানান, তরুণী খারাপ হলেও সেটা দেখার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং পুলিশ রয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে যেটা হয়েছে সেটা অবশ্যই অপরাধ। সে জন্য তরুণীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তাকে পেলে ঘটনার রহস্য কী, সেটা বেরিয়ে আসবে। আপাতত ফরিদকে আটক দেখানো হয়েছে।
কেননা, সে ধর্ষণ এবং অপহরণ ছাড়াও আশ্রয়দাতাকে মারধর, ঘরে লুটপাট এবং আশ্রিতা তরুণীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি ধারণ করেছে। ভিকটিম জুয়েল মল্লিক চাইলে এই ঘটনায় পর্ণগ্রাফি আইনে মামলা হবে বলেও জানিয়েছেন মডেল থানার এসআই মাহামুদ।
এমএইউ