জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফ চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কবিরের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রাপ্যের চেয়ে ১০ কেজি কম চাল দিয়ে প্রায় ৩১ মেট্রিক টন ভিজিএফের চাল আত্মসাৎ করেছেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য সোয়া ১১ লাখ টাকা।
সম্প্রতি ৩০ জন জেলে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ আমলে নিয়ে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে জেলেরা উল্লেখ করেছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ও জাটকা ইলিশ না ধরার জন্য নলটোনা ইউনিয়নের ১ হাজার ৫৮০ জন জেলেকে দুই মাসের ৪০ কেজি করে ৮০ কেজি ভিজিএফ চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। গত ২৯ মার্চ ওই চেয়ারম্যান তার কার্যালয়ে বসে কিছুসংখ্যক জেলেকে নামকাওয়াস্তে চাল বিতরণ করেন।কিছু জেলে অভিযোগ করেছেন তালিকায় নাম থাকলেও তারা চাল পাননি।
অভিযোগে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রত্যেক জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল দেয়া কথা। কিন্তু চেয়ারম্যান গোলাম কবির ৪০ কেজি চালের পরিবর্তে ৩০ কেজি চাল দিয়েছেন। এ রকম ১ হাজার ৫৮০ জন জেলেকে যদি ২০ কেজি কম চাল দেয়া হয়, সে হিসেবে বাড়তি থাকে ৩১ মেট্রিক টন ৬০০ কেজি চাল। আর সেটাই আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান। যার বাজার সোয়া ১১ লাখ টাকা।
গর্জনবুনিয়া জেলে আবদুল্লাহ দৈনিক জাগরণ এর কাছে অভিযোগ করে বলেন, দুই মাসের জন্য ৮০ কেজি চাল সহায়তার পাওয়ার কথা। অথচ বিতরণের সময় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাকে কোনও চাল দেয়া হয়নি। গত ১২ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেয়ার পর চেয়ারম্যান ডেকে নিয়ে তাকে ৬০ কেজি চাল দেন।
ওই জেলে বলেন, জাটকা নিষেধাজ্ঞাকালীন বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় নদীতে অন্য কোনও মাছ ধরা থেকে বিরত থাকেন তারা। অথচ খাদ্য সহায়তা ২০ কেজি কম দেয়া হয়েছে। তাই সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।
চাল পাননি গর্জনবুনিয়ার জেলে ছগির হোসেন ও হানিফারও। তারা অভিযোগ করে বলেন, তালিকায় নাম থাকায় স্বত্বেও চাল দেয়া হয়নি তাদের।
তারা বলেন, আমরা ৮-১০ বছর ধরে নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা-নির্বাহ করি।বর্তমান করোনার প্রাদুর্ভাব কোনও কাজ কাজ করা যাচ্ছে না ।তার মধ্যে আবার জেলে সহায়তার চালও আমাদের দেয়া হয়নি। যাদের এই সহায়তার চাল দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকই জেলে না হয়ে সহায়তা পেয়েছেন।
চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবির বলেন, চাল বিতরণে কোনও অনিয়ম হয়নি। শত্রুপক্ষ তাকে নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করছে। শুনেছি অভিযোগের তদন্ত চলছে। তালিকা অনুসারে জেলেদের মধ্যে দুই মাসের ৮০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।
এই মন্তব্য করা পরক্ষণেই প্রতিবেদককে ম্যানেজ করা চেষ্টা করেন তিনি। ওই চেয়ারম্যান বলেন, এই বিষয় নিয়ে আপনার সাথে দেখা করবো আনে।
দৈনিক জাগরণকে বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, চাল বিতরণের অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করার জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি তদন্ত করে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। অভিযোগের সত্যতা পেলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এসএমএম