কক্সবাজারের চকরিয়ার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের খিলছাদক গ্রামের ২৬টি একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যরা সাহরি খেয়ে ঘুমোতে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় একযোগে সশস্ত্র একদল সন্ত্রাসী হানা দিয়ে মধ্যযুগীয় বর্বরতা চালিয়েছে পুরো গ্রামে।
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) ভোররাতে মাতামুহুরী নদীর তীরে জেগে উঠা চরের জায়গার দখল নিতে এই নারকীয় তাণ্ডব ও লুটপাট চালায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় এসব পরিবারের বসতবাড়িতে আগুন দিয়ে সবকিছু পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। লুট করে নেয়া হয়েছে নগদ টাকা, গবাদি পশু, মালামালসহ অন্তত কোটি টাকার সম্পদ। আগুনে পুড়ে মারা গেছেন পঞ্চাশোর্ধ এক নারী। গুলিবিদ্ধ ও ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি কোপে আহত হয়েছেন নারী-পুরুষসহ অন্তত ২০ জন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামবাসী জানান, ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অন্তত অর্ধশত রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে।
আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া বৃদ্ধার নাম মনোয়ারা বেগম (৫৫)। তিনি ওই গ্রামের মোজাহের আহমদের স্ত্রী। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- মারা যাওয়া বৃদ্ধার স্বামীর মোজাহের আহমদ (৭০), ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক সাজ্জাদ হোসেন (২৫), মো. মুরাদ (২৩), আবু ছালেক (৪২), নবীর হোছাইন (৫০), মো. বাবলু (২২) ও মো. আলম (৪৫)।
এই নারকীয় তাণ্ডবের খবর পেয়ে কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, থানার ওসি হাবিবুর রহমান, উপজেলা ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা সাইফুল হাছান, হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম, এসআই অপু বড়ূয়া, বরইতলী ও কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার ও মক্কী ইকবাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
থানার ওসি হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থল থেকে জানান, যারা এই তাণ্ডবে জড়িত তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ঘটনার সময় এক নারী আগুনে পুড়ে মারা যাওয়াসহ অসংখ্য নারী-পুরুষ আহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে ওসি বলেন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, মধ্যযুগীয় এই বর্বরতায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করে জমা দিতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যাতে এসব পরিবারকে সরকারিভাবে সার্বিক সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন করা যায়। এছাড়াও প্রাথমিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারগুলোকে সহায়তা দেয়া হবে। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে করে কঠোর শাস্তিও নিশ্চিত করা হবে।
কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ২৬ পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে এক বস্তা করে চাল, দুই বান্ডিল ঢেউটিন ও সরকারিভাবে আরো দুই বান্ডিল করে ঢেউটিন প্রদান করা হয়েছে।
যারাই এই নারকীয় তাণ্ডবে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে আইনগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশকে।
এসএমএম