দেশে টক জাতীয় যে কয়টি ফল পাওয়া যায় তার মধ্যে বিলম্বি অন্যতম। দেশের কিছু কিছু এলাকায় এটি বেশ জনপ্রিয় ফল। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম ও কিশোরগঞ্জ জেলায় এই ফল বেশ পরিচিত। এটি দেখতে অনেকটা পটলের মতো। তবে পটলের চেয়ে আকারে ছোট। এর রং সবুজ এবং চোখ জুড়ানো। স্বাদে ও গুণে বেশ চমৎকার। এই ফল কাঁচা খাওয়া যায়। এ দিয়ে চাটনি এবং আচারও তৈরি হয়। তরকারি ও ডালে টকের স্বাদ আনার জন্য বিলম্বি ব্যবহৃত হয়। এটি বিলেবু ও বিলম্ব লেবু নামেও পরিচিত।
বিলম্বির ইংরেজি নাম বিলিম্বি। বৈজ্ঞানিক নাম এভেরহোয়া বিলিম্বি (Averrhoa Bilimbi)। এর গাছ ট্রি সোরেল (Tree Sorrel) নামেও পরিচিত। বিলম্বি গাছ দেখতে অনেকটা কামরাঙা গাছের মত। এর পাতাও কামরাঙা পাতার মতই। গাছের উচ্চতা হয় মাঝারি আকারের অর্থাৎ পাঁচ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চে গাছে ফুল আসে। তবে ফল পাওয়া যায় প্রায় সারা বছরই। বিলম্বি ফল গাছে ধরে থোকায় থোকায়। গাছের ডালে তো বটেই, কাণ্ড ঘিরেও ফল আসে। ফল তিন থেকে ছয় সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হয়।
কিশোরগঞ্জ এলাকায় বাড়ির আঙিনা বা উঠোনের যে কোনো জায়গায় বিলম্বি গাছ শোভা পায়। সেই গাছ থেকেই তারা প্রয়োজনীয় বিলম্বি তোলেন এবং পরিবারের চাহিদা পূরণ করেন।
বিলম্বির পুষ্টিগুণ অসাধারণ। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, আয়রন, ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম। সবচেয়ে বেশি রয়েছে ভিটামিন সি। এর টক স্বাদ জলপাইয়ের কাছাকাছি। এলাকা ও জাত ভেদে কামরাঙার মত স্বাদযুক্ত। এর আচার ও চাটনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিলম্বি দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে আচার তৈরি হয়। বিলম্বি এর আচার ব্রিটেনে পাঠানো হয়। অনেকেই আগ্রহী ব্যক্তি নিজেরা উদ্যোগী হয়ে বিলম্বি গাছ লাগিয়েছেন।
এমনই একজন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে আড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নের কুড়িঘাটে বৃক্ষপ্রেমী এ কে এম শফিকুল হক। তিনি তার বাড়ির আঙিনায় লাগিয়েছেন বিলম্বি গাছ। তাতে ফলও এসেছে। শফিকুল হক জানান, তিনি উপজেলায় বৃক্ষ মেলায় বিলম্বির সাথে পরিচিত হন এবং এই গাছ লাগানোর ইচ্ছে জাগে। তবে সে সময় চারা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে তিনি এর চারা সংগ্রহ করে লাগিয়েছেন। এতে ফল ধরেছে। এই ফল পেয়ে তিনি বেশ খুশী।
হোসেনপুরে শফিকুলের বাড়িতেই শুধু বিলম্বি ফলের গাছ শোভা পাচ্ছে না, অনেকের বাড়ি অথবা ভবনের ছাদেও বিলম্বিত ফল গাছের রোপণ বাড়ছে। শফিকুল এর গাছে প্রচুর বিলম্বি ফল ধরেছে। তিনি নিজে খেয়েছেন, আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের দিয়েছেন।
বিলম্বি দিয়ে কয়েক রকমের আচার তৈরি হয়। এর মধ্যে টক, ঝাল ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত আচার বেশি জনপ্রিয়। তবে বিলম্বির কাশ্মীরী আচার স্বাদে অনন্য।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ইমরুল কায়েস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বৃক্ষরোপনের যে তাগিদ পড়েছে তাতে বিলম্বি গাছও ব্যাপকভাবে লাগানো যেতে পারে। তিনি আরোও বলেন, আমড়া ,কামরাঙা, অরবড়ই, জলপাই, তেঁতুল গাছ লাগাই। এগুলো মৌসুমি ফল। এগুলোর পাশাপাশি বিলম্বি গাছও লাগানো যেতে পারে। বিলম্বি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল। এর গাছও বেশ দৃষ্টিনন্দন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই গাছ অন্য সব গাছের মতই উপযোগী। যেহেতু সারা বছর গাছে ধরে তাই বিলম্বি ফল অর্থকরীও বটে। বাণিজ্যিকভাবেও এর চাষ করা যেতে পারে।