• ঢাকা
  • সোমবার, ০৭ এপ্রিল, ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২১, ১১:০৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৩, ২০২১, ০৫:২৩ পিএম

যমুনার পেটে বিস্তীর্ণ জনপদ, স্থায়ী বাঁধের দাবি

যমুনার পেটে বিস্তীর্ণ জনপদ, স্থায়ী বাঁধের দাবি

বর্ষার শুরু হতে না হতেই টাঙ্গাইলে রাক্ষুসী যমুনা উত্তাল হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে গিলেছে শতাধিক বাড়িঘর, রাস্তা, হাট, তাঁত ফ্যাক্টরি, সমিল ও ফসলি জমি। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরুরিভাবে ফেলা জিওব্যাগও কাজে অসছে না। যমুনা তীরবর্তী অসহায় মানুষ রয়েছেন চরম আতংকে। তাদের দাবি স্থায়ী বাঁধ।

জানা যায়, যমুনা নদী কোল ঘেঁষা জেলার সদর উপজেলা, কালিহাতী, নাগরপুর ও ভূঞাপুর উপজেলা। এবার বর্ষার শুরুতেই যমুনার ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বুধবার থেকে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। শুধু সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের শতাধিক বাড়িঘর, তাঁত ফ্যাক্টরি, সমিল ও হাট যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। 

সদরের মাহমুদনগর ইউনিয়নের মাকরকোল, কেশবমাইঝাইল, তিতুলিয়া, নয়াপাড়া, কুকুরিয়া, বারবাড়িয়া; কাতুলী ইউনিয়নের দেওরগাছা, রশিদপুর, ইছাপাশা, খোশালিয়া, চানপাশা ও নন্দপাশা; হুগড়া ইউনিয়নের মসপুর, বারবেলা, চকগোপাল ও কচুয়া। কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের আলীপুর, ভৈরববাড়ী। নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের পাইকশা মাইঝাইল, খাস ঘুণি পাড়া, খাস তেবাড়িয়া, চর সলিমাবাদ, ভূতের মোড়; ভারড়া ইউনিয়নের শাহজানি, ভারড়া, পাঁচতারা, আগদিঘলীয়া। ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ভালকুটিয়া এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেশি।

সরেজমিনে দেখা যায়, চরপৌলী হাটখোলা সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড হাটখোলাটি রক্ষার জন্য জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে ৩০০মিটার এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে। জিওব্যাগগুলোও যমুনার তীব্র স্রোতে তলিয়ে গেছে। টাঙ্গাইল সদর ও কালিহাতী উপজেলার সীমান্ত এলাকা উত্তর চরপৌলী ও আলীপুর গ্রামের অংশে অসমাপ্ত শেখ হাসিনা সড়ক(নর্দান প্রজেক্ট) রক্ষার জন্য ১০০মিটার এলাকায় ফেলা জিওব্যাগ তলিয়ে গিয়ে ভাঙনে সড়কটির ৫০০-৬০০ মিটার নদীগর্ভে চলে গেছে।

কাকুয়া ইউনিয়নের উত্তর চরপৌলীর নুরুল ইসলামের দেড় একর জায়গায় স্থাপিত তাঁত ফ্যাক্টরি, ঠান্ডু মিস্ত্রির স’মিল, একই এলাকার জলিল, বাতেন, সামাদ, ইসমাইল, মোতালেব হোসেন, খালেক প্রামাণিক, আলিম, রহিম, বাবুল মোল্লা, নুর আলম মোল্লা, আব্দুল্লাহ, আবু বকর, আব্দুল মান্নান, লালচান মিয়া, মেকাম্মেল হক, শামসুল আলম, শাহ আলম, নজরুল ইসলাম; দশখাদা ও হাটখোলা এলাকার নুরুন্নাহার বেগম, মিনা আক্তার, সোনা খা, শিবলু তালুকদার, আলেয়া বেগম; পানকোড়া ও কবরস্থান পাড়ার মন্টু শেখ, মো. রোশনাই মিয়া, আব্দুস ছবুর, আনছের মন্ডল, গোলাপ খা, আব্দুল গফুর মন্ডল ও আজিজ মন্ডলসহ শতাধিক বাড়িঘর ও ফসলি জমি ভাঙনের শিকার হয়ে যমুনা গর্ভে চলে গেছে।

আব্দুল গফুর মন্ডল ও আজিজ মন্ডল জানান, বুধবার বিকালে হঠাৎ যমুনার তাণ্ডবে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে ৬০ শতাংশের বাড়িঘর নদীর পেটে চলে গেছে। মুহূর্তের মধ্যে যমুনা গ্রাস করে নিয়েছে। নদীতে কত মানুষ যে একেবারে নিঃস্ব হয়েছে তার হিসেব কোথাও নেই।

কাকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, ভাঙনের শিকার হয়ে তার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। টানা ৩-৪ দিনের ভাঙনে বড় গ্রাম চরপৌলীর বহু স্থাপনা ও বাড়িঘর যমুনার যমুনা গিলে খেয়েছে। মাহমুদ নগর ইউনিয়নের গোলচত্তর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। 

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, চরাঞ্চলের বিশাল এলাকা প্রতিবছরই যমুনার ভাঙনের শিকার হয়। ভাঙনরোধে তিন বছর আগে একটি স্থায়ী বাঁধের প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হয় নি। জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

জাগরণ/এমআর/এমএ