একসময় তাদের ছিলনা মাথা গোঁজার ঠাঁই, অন্যের বাড়িতে সারাদিন কাজ করে সেখানেই নিদ্রাযাপন করতে হত তাদের। স্বপ্নহীন মানুষদের কেউ কেউ কানে শুনেন না, কেউ বা বিধবা, কেউ কেউ বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। সেইসব মানুষরাই মুজিব বর্ষে পেয়েছেন তাদের স্বপ্নের ঠিকানা, হয়েছে নিজেদের মাথা গোজার ঠাই। চারপাশে সবুজ ফসলের ক্ষেত। মাঝখানে সারিসারি রঙিন পাকা দালান।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নের কেশবপুর বাজার থেকে একটু ভিতরে গুচ্ছগ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্প। এখানে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য মুজিববর্ষের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ১৫ টি ঘর তুলে দেয়া হয়েছে উপকারভোগীদের মাঝে। প্রতিটি ঘরে দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ, স্থাপন করা হয়েছে নলকূপ। যেকেউ গেলে এগিয়ে আসেন তাদের সুখ- দুঃখের গল্প শুনাতে। গত বুধবার সারাদেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম তাদের কেমন কাটল ঈদ। একেকজন মানুষ শুনালেন একেকরকম গল্প। আশ্রয়ণ প্রকল্পের জাহারা বেগম, স্বামী আলী মিয়া, দুই ছেলে নিয়ে বসবাস করেন এই ঘরে।
ঈদ কেমন কাটল জিজ্ঞেস করতেই কেঁদে ওঠেন। চোখেমুখে তৃপ্তির হাসি নিয়ে বলেন, ঘর পেয়েছেন এটাই বড় বিষয়, তবে ঈদ কেটেছে তার খেয়ে-না খেয়েই। ঈদের আগে কিছু চাল পেয়েছিলেন, বাজার করতে পারেননি। এভাবেই কোনোরকমভাবে কেটেছে তার ঈদ। আরেকজন উপকারভোগী আবুল মিয়া জানান, তিনি ডায়াবেটিসের রোগী, স্ট্রোক করেছেন দু'বার। ঈদের আগ পর্যন্ত তিনি ঘরের সামনে একটি চায়ের দোকান দিয়েছিলেন। দোকানের আয়ে চলত সংসার। অন্য আরেকজন উপকারভোগীর অভিযোগে স্থানীয় মেম্বার তার দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন।
অন্য আরেকজন উপকারভোগীর অভিযোগে স্থানীয় মেম্বার তার দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন। সবুরা খাতুন এর স্বামী নেই, দুই ছেলে আছে। তিনি জানান, আগে যেখানে থাকতেন সেখান থেকে অনেকেই মাংস পাঠিয়েছেন, মোটামুটিভাবে আগের চেয়ে ভালই গেছে তার ঈদ। শিরুই বেগম আগে নোয়াগাও থাকতেন। তিনিও পেয়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। তিনি জানান, করোনা আর লকডাউনের কারণে তারা কোন কাজ কর্ম করতে পারেন না।
ঘর পেলে ও কর্ম নেই। তাই মানবেতরভাবেই কেটেছে তার ঈদ। একইভাবে মিনারা বেগমসহ ১৫ টি পরিবারের স্বপ্নের ঘরে খেয়ে না খেয়ে কেটেছে তাদের ঈদ। যাদের পরিচয় দেয়ার মত কিছুই ছিল না, এখন তারা বুকে সাহস রেখে পরিচয় দিতে পারেন, তাদের এর চেয়ে বেশি স্বপ্ন নেই। এখন কোন একটা কাজ করে খেয়ে বাকি জীবন পার করে দিতে পারলেই তাদের চলে। সবকিছুর পরে ও সবকয়টি পরিবারই শতকষ্টে থাকলে ও হাসিমুখে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলেনি।
এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুল ইসলাম জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাস করা মানুষদের আমি সবসময় খোঁজ খবর রাখি। ঈদের আগে শুধু ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নেই ২১৩০ জনকে ১০ কেজি করে চাল হাতে পৌঁছে দিয়েছি, এবং ৮৪৪ জন পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নগদ ৫০০ টাকা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের সবাই পেয়েছেন সহায়তা। এছাড়াও আমি নিজ থেকে কেশবপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৫ টি পরিবারকে ১৫ কেজি খেজুর পৌঁছে দিয়েছি।
জাগরণ/এমআর