চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাতে মৃতদের মরদেহ বাড়ির উঠানেই দাফন করা হয়েছে। একই সঙ্গে কবরগুলোর ওপরে মজবুত করে ঢালাই দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (০৬ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের মৃত ১৬ জনের মধ্যে ১৫ জনের কবরেই ঢালাই দেওয়া হয়েছে।
বজ্রপাতে মারা যাওয়ায় মরদেহ কবর থেকে চুরির ভয়ে ঢালাই দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৃত তোবজুলের পরিবার।
বুধবার (০৪ আগস্ট) দুপুরে বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যুর পর রাতেই একই পরিবারের ছয়জনকে বাড়ির উঠানে দাফন করা হয়। বাড়ির মালিক তোবজুল হক, তার স্ত্রী জামিলা বেগম, মেয়ে লাচন, ছেলে বাবুল, সাদিকুল ইসলাম ও সাদিকুলের স্ত্রী টকিয়ারা বেগমকে পাশাপাশি দাফন করা হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার (০৫ আগস্ট) দুপুরে সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণপুর গ্রামে মৃতদের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, ছয়টি কবরের সারিকে ঘিরে খননের কাজ চলছে। পরে বিকেলে তা ঢালাই করা হয়।
বজ্রপাতে মৃত তোবজুলের মেয়ের জামাই মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা এর আগে বহুবার শুনেছি বজ্রপাতে মৃতদের মরদেহ কবর থেকে চুরি করে নেওয়া হয়। এখানে আমার শশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের ছয় সদস্যকে দাফন করা হয়েছে। বাড়ির সামনে কবর দেওয়ার পরও স্বজনদের মাঝে ভয় কাজ করছিল। তাই কবরের ওপরে বৃহস্পতিবার বিকেলে সিমেন্টের ঢালাই করেছি। ছয়টি কবর ঘিরে তিন ফুট ইটের গাঁথুনি দিয়ে তার ওপরে ঢালাই করা হয়েছে।
বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে বজ্রপাতের কবলে পড়ে বেঁচে ফিরে আসা বরযাত্রী বৃদ্ধ মোফাজ্জল হোসেন (৬২) জানান, বাড়ির সামনেই বর মামুনের বাবার মরদেহ দাফন করা হয়েছে। বরের নানার বাড়ির সামনের ছয়টি কবরের মতো এখানেও ঢালাই দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আগামীকাল (শনিবার) হয়তো এই কবরটিও ঢালাই করা হবে।
নিহত তোবজুলের প্রতিবেশী তসিকুল ইসলাম বলেন, তাদের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই মারা গেছে। তাই এলাকার লোকজনই তাদের কবর খনন, দাফন কাজ ও কবরের ওপরে সিমেন্টের ঢালাইয়ের কাজ করেন। মরদেহগুলো সুরক্ষিত রাখতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিহতের স্বজনরা দাফনের পর বুধবার (০৪ আগস্ট) বৃষ্টিতে ভিজে সারারাত কবরের পাশে পাহারায় ছিল বলে জানান তিনি।
ঢালাই কাজে অংশ নিয়েছেন স্থানীয় রাজমিস্ত্রি সোহেল রানা। তিনি বলেন, শুনেছি বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তির মরদেহ নাকি খুব দামি। এসব দিয়ে নাকি দামি জিনিসপত্র তৈরি হয়। তাই লাশ চুরি করে নেয়। ৪ বছর আগে এই গ্রামে বজ্রপাতে মারা যাওয়া একজনের বাড়ির পেছন থেকে লাশ চুরি হয়ে যায়। লাশ যাতে চুরি করতে না পারে তাই মজবুত করে ঢালাই দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের ০৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আজিজুর রহমান আজিম গণমাধ্যমকে বলেন, সজিবের ছাড়া বাকি সবগুলো কবরের ওপর সিমেন্টের ঢালাই করা হয়েছে। আগামীকাল সেটিও ঢালাই করা হবে। সবগুলো মরদেহ বাড়ির উঠানে দাফন করা হয়েছে। এর আগে এই গ্রামে বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তির লাশ চুরি হয়েছে। তাই চুরি ঠেকাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কবরগুলো ঢালাই দিয়ে সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বজ্রপাতে মৃত ১৭ জন হলেন- সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ঘাটাপাড়ার সাত্তার আলীর ছেলে সহবুল (৩০), চর সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের টিপুর স্ত্রী বেলী বেগম (৩২), মহরাজনগর ডানপাড়ার জামালের ছেলে লেচন (৫০), রফিকুল ইসলামের ছেলে বাবলু (২৬), একই গ্রামের মৃত সৈয়ব আলীর ছেলে তোবজুল (৭০), তোবজুলের স্ত্রী জমিলা (৫৮), ছেলে সাদল (৩৫), তেররশিয়া দক্ষিণপাড়ার মৃত মহবুলের ছেলে রফিকুল (৬০), সূর্যনারায়ণপুরের ধুনু মিয়ার ছেলে সজিব (২২), একই গ্রামের সাহালালের স্ত্রী মৌসুমী (২৫), বাবুডাইংয়ের মকবুলের ছেলে টিপু (৪৫), কালুর ছেলে আলম (৪০), মোস্তফার ছেলে পাতু (৪০), সুন্দরপুরের সেরাজুলের ছেলে আতিকুল ইসলাম ডাকু (২৪), ফাটাপাড়ার সাদিকুলের স্ত্রী টকিয়ার বেগম (৩০), জনতার হাট গ্রামের বাবুর ছেলে তামিম (৫) ও নৌকার মাঝি শিবগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ পাঁকা গ্রামের রফিকুল ইসলাম।
গত বুধবার (০৪ আগস্ট) দুপুরে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁকা ঘাটে বজ্রপাতে বরপক্ষের ১৬ জন এবং স্থানীয় এক মাঝি ঘটনাস্থলেই মারা যান। বরপক্ষের মোট ৪৭ জন সদস্য পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে কনের বাড়িতে যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়াও বজ্রপাতের ঘটনায় আরও অন্তত ১২ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
জাগরণ/এসকে