হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় শ্রমিক সংকটকের মধ্যেই শুরু হয়েছে আমন ধান রোপণ। উপজেলার ব্রাহ্মণডুরা, নুরপুর, শায়েস্তাগঞ্জ ও পৌর এলাকার আবাদযোগ্য ভূমিতে চলছে আমন ধান রোপণের কাজ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোনো কোনো কৃষক বীজতলা থেকে বীজ সংগ্রহ করছেন, কেউ চারা রোপণ করছেন, আবার কেউ শেষ মুহূর্তে জমি চাষ করে রোপণের উপযোগী করে তুলছেন। শায়েস্তাগঞ্জে বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় স্থানীয় শ্রমিকরা অনেকেই চাকরি করেন, আবার কেউ কেউ দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতেও কাজ করেন। সেজন্য শায়েস্তাগঞ্জে কৃষিকাজে খরচ অনেক বেড়ে গেছে এবং শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলায় শ্রমিক সংকটের কারণে দেখা যায় অনেকেই চা-বাগানের শ্রমিকদের দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে কাজে লাগিয়ে ধান রোপণ করাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে তুলনামুলক কম খরচে কৃষকরা জমিতে চারা রোপণ করতে পারছেন। এ সকল শ্রমিকদের প্রতিদিন মজুরী হিসেবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দিতে হয়।
উপজেলার কৃষক কামরুল মিয়া জানান, শ্রমিক সংকটের কারণে ও কৃষিকাজে খরচ বেড়ে যাওয়ায় তিনি তার দুটি জমি এবার বর্গা দিয়েছেন। এ মৌসুমে তিনি মাত্র একটি জমিতে চাষ করেছেন। চলতি সপ্তাহেই উনপঞ্চাশ জাতের চারা রোপণ করবেন।
স্থানীয় কৃষক হেলিম মিয়া বলেন, আমরা অনেকেই বৃষ্টির অভাবে আউশ ধান চাষ করিনি। সে কারণে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি আমন ধান চাষ করার। যদিও শ্রমিক সংকটে পিছিয়ে পড়েছি। বর্তমানে প্রতি একর জমিতে ধান রোপণ করতে প্রায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকার মতো লাগে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর আবাদ করার মতো ভূমি রয়েছে।
শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন জানান, শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার ৪০০ হেক্টর আবাদযোগ্য জমির মাঝে প্রায় ২০ শতাংশ জমিতে ইতোমধ্যে ধান রোপণ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের বাকি জমিগুলোতেও ধান রোপণ করা হবে।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সুকান্ত ধর জানান, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাটি ক্রমাগতভাবে শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় এখানকার মানুষজন শিল্পকারখানায় যুক্ত হয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে। এই সংকট নিরসনকল্পে এবং সময় বাঁচানোর জন্য সরকার রাইস ট্রান্সপ্লান্টার বা বীজ ও চারা রোপণ যন্ত্রটি কৃষকের জন্য ভর্তুকি মূল্যে দিচ্ছে। কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী সেটি সংগ্রহ করে দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসএমই এর মাধ্যমে দল গঠন করে তাদেরকে কৃষি সহায়তা হিসেবে নগদ অর্থ, সার ও বীজ প্রদান করা হচ্ছে।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিউটন অধিকারী জানান, এ বছর বিভিন্ন জাতের ধান কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্রি ধান-২২, ২৩, ৩২, ৩৩, ৪৪, ৪৬, ৪৯, ৫০, ৭২ ও ৭৪। উল্লেখিত বীজগুলোর মাঝে বিশেষ করে ২২, ৩৪ ও ৪৬ নম্বর বীজগুলো শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা বেশি পছন্দ করেন।
জাগরণ/এমআর