এক সময় সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়তো জেলেদের জালে। আর সেই রুপালি ইলিশ আসতো মোংলা বাজারে। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এসব নদীতে ইলিশ মাছ না পাওয়ায় হতাশ এখানকার জেলেরা।
গভীর সমুদ্র থেকে উপকুলের কাছাকাছি ইলিশ না আসা, সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার ও নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া আর গভীর সাগরে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের সিমানায় মাছ শিকারের কারণেই মোংলাসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে ইলিশের দেখা নাই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মৎস্য বিভাগ ও বিশেষজ্ঞরা।
স্থানীয় জেলে-ব্যবসায়ীরা জানায়, চলতি ইলিশ মৌসুমের মহাজন ও আড়ৎদারদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে জাল-নৌকাসহ খাওন -খোরাক গোছগাছ করে সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে জেলেরা ইলিশ শিকারের নামে। কিন্তু সুন্দরবন এলাকার পশুর, বলেশ্বর, কচা, শিবসা , পানগুছি ও বিষখালী নদীতে এখন পর্যন্ত ইলিশের দেখা মিলছে না।
স্থানীয় জেলে সমিতির সভাপতি বিদ্যুৎ মন্ডল জানান, সুন্দরবন উপকূলের এ সব নদ-নদীর ইলিশের ওপর নির্ভর প্রায় এক লাখ জেলে পরিবার। চলতি ভর মৌসুমে ইলিশ না পাওয়ায় জেলে পরিবারগুলোতে দেখা দিয়েছে তীব্র হতাশা। তিনি আরও জানান, দিন-রাত জাল ফেলে ও নদীতে দাপিয়ে দু-একটি ইলিশ ধরা পড়লেও তা আকারে ছোট। ইলিশের দেশখ্যাত সুন্দরবন উপকূলের হাট-বাজারেও তেমন ইলিশ উঠছে না।
উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, নদীতে ইলিশ না পাওয়ার ব্যাপারে আমাদের কাছে গবেষণামূলক তথ্য না থাকলেও মনে হচ্ছে গভীর সমুদ্র (বঙ্গোপসাগর) থেকে ইলিশ না আসায় নদীতে জেলেরা ইলিশ মাছ কম পাচ্ছে। আর উপকূলের কাছাকাছি মাছ আসার প্রধান কারণ নদী ও খালে বিষ দিয়ে অবৈধ উপায়ে মাছ শিকার। এছাড়া আমাদের এখানকার জেলেদের সাগরে মাছ আহরণের সক্ষমতা না থাকা। একই সাথে নদীতে জাহাজ চলাচলে মাছ এসব নদীতে আসছে। আর তাই ভরা মৌসুমেও মাছ পাচ্ছে না আমাদের জেলেরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) স্থানীয় সমন্বকারী ও পশুর রিভার ওয়াটারকিপার নুর আলম শেখ বলেন, সুন্দরবনের নদ নদী সংলগ্ন অপরিকল্পিত শিল্প কারখানা স্থাপন,বন্দরে আসা বিভিন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে বর্জ্য ফেলায় নদী দূষণ এবং সুন্দরবনের বিষ দিয়ে মাছ শিকারের কারণে ইলিশের আকাল পড়েছে। বিষ দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করতে হবে এবং আইন মেনে বাণিজ্যিক জাহাজের বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করতে হবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. গাউছিয়াতুর রেজা বানু বলেন, নদী দূষন, সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকারসহ নদীর গভীরতা না থাকায় সাগর থেকে ইলিশ আসছে না। ইলিশ সাধারণত গভীর সমুদ্রে থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু মোংলা ও সুন্দরবনের নদী সহনীয় পর্যায়ে না থাকায় ইলিশ আসছে না। ইলিশ রক্ষায় প্রাথমিকভাবে নদী শাসন করতে হবে এবং এটা নিয়ে আরও গবেষণা করে ইলিশ সুন্দরবনের নদীমুখী করতে হবে।
জাগরণ/এমআর