• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২১, ০১:৫২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২৬, ২০২১, ০১:৫২ পিএম

আশুগঞ্জ স্টিল রাইস সাইলোর নির্মাণ কাজে ধীরগতি

আশুগঞ্জ স্টিল রাইস সাইলোর নির্মাণ কাজে ধীরগতি

প্রকাশ দাস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

৫৪০ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনা নদীর পাশে নির্মিত হচ্ছে স্টিল রাইস সাইলো। গত বছরের এপ্রিলে সাইলোটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত শেষ হয়নি আধুনিক এই সাইলোর নির্মাণ কাজ। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে নির্মাণ কাজ চলছে ধীরগতিতে। 

বর্তমানে সীমিত পরিসরে স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কাজ চললেও সাইলোর প্রয়োজনীয় মালামাল বিদেশ থেকে আনা যাচ্ছে না। এর ফলে পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করে ট্রায়াল রানের পর আগামী বছরের এপ্রিল অথবা মে মাস থেকে সাইলোটি পুরোপুরি চালু করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৫৪০ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৪ টাকা ব্যায়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে নির্মাণ কাজ চলা স্টিল রাইস সাইলোটি ১ লাখ ৫ হাজার টন চাল ধারণক্ষমতার। এটির নির্মাণ কাজে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে জেরিকো-ফ্রান্স।
আশুগঞ্জ স্টিল রাইস সাইলোতে স্বয়ংক্রিয় তাপ নিয়ন্ত্রয়ণ যন্ত্রের মাধ্যমে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে প্রায় দুই বছর পর্যন্ত চাল সংরক্ষণ করা যাবে। সংরক্ষিত চাল প্যাকেট ও বস্তাবন্দি করতে প্রতি ঘণ্টায় ৫০০ টন স্পিডের বেল্ট কনভেয়িং ও চেইন কনভেয়িং সিস্টেম থাকছে এই প্রকল্পে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর আমন ও বুরো মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টন চাল সংগ্রহ করে খাদ্য অধিদপ্তর। সংগৃহিত চাল বিতরণের পর উদ্বৃত্ত চালগুলো সাইলো না থাকায় চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদামে পাঠানো হয়। রাইস সাইলোটি নির্মিত হলে এখানেই সংগৃহিত চালের উদ্বৃত্ত সংরক্ষণ করা হবে। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পার্শ্ববর্তী জেলার চালও সংরক্ষণ হবে এ সাইলোতে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যমতে, আশুগঞ্জ স্টিল রাইস সাইলোর নির্মাণ কাজের জন্য ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল তমা কন্সট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড-ফ্রেমি জয়েন্ট ফেঞ্চার এর সাথে সাথে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী আধুনিক এ সাইলোতে মোট ৩০টি সাইলো বিন থাকবে। এছাড়া পরিদর্শন বাংলো, গোডাউন ও ব্যারাকসহ প্রয়োজনীয় ভবন থাকবে ১৬টি। সাইলো বিনগুলোর প্রতিটির ধারণক্ষমতা ৩হাজার ৫০০টন। ইতোমধ্যে ২৯টি সাইলো বিনের অবকাঠামোগত কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

বিনগুলোতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংযোগজনসহ আনুষাঙ্গিক সকল কাজই বাকি আছে। আর একটি বিনের কাজ এখনও শুরুই হয়নি। সাইলোর নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় অধিকাংশ মালামাল চীন, আমেরিকা ও ইতালি থেকে আনতে হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এসব মালামাল আনতে বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়া মেঘনা নদীতে জেটি নির্মাণ কাজও এখনও বাকি রয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ২৪ মার্চ থেকে পরবর্তী ৪ মাস নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এরপর কাজ শুরু হলেও সকল শ্রমিকরা কাজে আসেনি। এতে করে কাজের অগ্রগতিও আশানুরূপ ছিলনা।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের প্রজেক্ট ইনচার্জ মো. নিজামুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে পুরোদমে কাজ করা যাচ্ছে না। চলমান বিধিনিষেধ শুরুর আগে মজুদকৃত নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে এখন সীমিত পরিসরে কাজ চলছে। তবে করোনার কারণে সাইলোর প্রয়োজনীয় মালামালগুলো বিদেশ থেকে আনতে বিলম্ব হচ্ছে। সেজন্য প্রকল্পের কাজ শেষ করতে কিছুটা সময় লাগছে।

আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্পের পরিচালক মো. রেজাউল করিম সেখ বলেন, আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। আশুগঞ্জ সাইলোর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ। ‘সাইলোর বেশিরভাগ মালামাল আমেরিকা ও ইতালি থেকে আনতে হয়। গত বছর ইতালিতে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে কয়েকবার আমাদের শিপমেন্ট বাতিল হয়েছে। নতুন করে আবার এলসি খোলা হয়েছে। এখন মালামাল আসা শুরু করেছে। এগুলো সংযোজন করে নির্মাণ কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন করার পর ট্রায়াল রান শেষে আশুগঞ্জ সাইলোটি হস্তান্তর করতে হয়তো এপ্রিল-মে পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

জাগরণ/এমআর