মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন পশুপাখির বন্ধুত্বের খবর আমরা শুনেছি ও দেখেছি। কিন্তু নওগাঁতে প্রায় বিপন্ন প্রজাতির লাজুক প্রকৃতির খেঁকশিয়ালের সঙ্গে মানুষের গড়ে ওঠা সখ্যতা ও মিতালীর বিষয়টি ইতিমধ্যেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
অনেকটা অসাধ্য বিষয়কে সাধন করেছে নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর বিহারে চাকরি করতে আসা মানুষের সাথে শেয়ালের গড়ে উঠেছে গভীর সখ্যতা। বর্তমানে এই প্রাণিগুলোর খাবার যোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এই মানুষদের। বিলুপ্ত প্রায় এই লাজুক জাতের খেঁকশিয়ালকে সংরক্ষন ও বংশ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে দ্রুত সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন প্রকৃতি ও বন্যপ্রানী প্রেমীরা।
সূত্রে জানা গেছে, ঐতিহাসিক পাহাড়াপুর বৌদ্ধ বিহারে প্রায় বিপন্ন প্রজাতির এই লাজুক ও ছোট জাতের প্রায় ১শতটি খেঁকশিয়াল রয়েছে। এই শিয়ালগুলো বিহার খোলা থাকার সময় বিহারে আসা পর্যটকদের ফেলে দেওয়া বিভিন্ন খাবার খেয়ে আসতো। কিন্তু গত বছর থেকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যখন বিহারটি বন্ধ করে দেওয়া হলো তখন থেকে শিয়ালগুলো খাবার সংকটে পড়ে। সেই সময় তারা ক্ষুধার জ্বালায় রাতে চিৎকার ও কান্নাকাটি করতো। তখন বিহারের কাস্টোডিয়ান মুহাম্মদ ফজলুল করিম (আরজু) বিষয়টি বুঝতে পারেন। এরপর এই শিয়ালগুলোর জন্য অল্প অল্প করে খাবার দিতে শুরু করে।
কেউ নিজের টাকা দিয়ে পাউরুটি কিনে নিয়ে আসে। কেউ নিজেদের খাবার থেকে কিছু পরিমাণ খাবার দেয়। এভাবেই দীর্ঘ প্রায় ১ বছর শিয়ালগুলোকে খাওয়ানোর পর এখন তারা বিহারের মানুষগুলোর বষ্যতা স্বীকার করেছে। গড়ে উঠেছে শেয়াল আর মানুষের মাঝে সখ্যতা। প্রতিদিন বিহারের মানুষগুলো যা খায় শিয়ালগুলোকেও তা খাওয়ায়। বিশেষ করে প্রতিদিন রাতে খিচুরী রান্না করে খাওয়ানো হয়। আবার কেউ অন্যান্য খাবারও শিয়ালগুলোর জন্যও নিয়ে আসছে। প্রতিদিন রাতে ডাক দিতেই ছুটে আসছে লাজুক প্রকৃতির শিয়ালগুলো। কাছে বসে খাবার দেন আরজু। এমন করে দীর্ঘদিনে ওদের সাথে গভীর সখ্যতা বনে গেছে তার। এই মিতালী দেখতে দিনের পাশাপাশি রাতেও পাহাড়পুরে আসছেন অনেক উৎসুক মানুষ। তবে বর্তমানে নিজেদের খরচে শিয়ালগুলো খাওয়ানো অনেকটাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে এই মানুষগুলোর পক্ষ্যে। অপরদিকে এই বিপন্ন প্রায় শিয়ালগুলোকে যদি সংরক্ষন করা যেতে তাহলে হয়তো বা আরো অনেক বছরের জন্য এদের বাঁচিয়ে রাখা যেতো।
নওগাঁ থেকে আসা পর্যটক আব্দুর রউফ পাভেল বলেন, মানুষের সঙ্গে শিয়ালের এমন বন্ধুত্ব সত্যিই বিস্ময়কর। তবে এদের সংরক্ষনের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। তা না হলে একসময় এই বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির সুন্দর ও লাজুক প্রকৃতির খেকশিয়ালগুলো হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বৌদ্ধ বিহারের কাস্টোডিয়ান মুহাম্মদ ফজলুল করিম (আরজু) বলেন, পশুপাখিকে ভালোবাসার রেশ থেকেই এই শিয়ালগুলোর প্রতি ভালোবাসার সৃষ্টি হয়েছে। আমি যতদিন এই বিহারে আছি ততদিন এদেরকে খাওয়ানোর চেষ্টা করবো। তবে পূর্বে বিহারে পর্যটকদের পিকনিকের অনুমতি ছিলো বলে এই শিয়ালসহ অন্যান্য প্রাণীদের খাবারের তেমন কোন সমস্যা হতো না। বর্তমানে বিহারে পিকনিক বন্ধ করে দেওয়ার কারণে শিয়ালগুলো অনেকটাই খাবার সংকটে পড়েছে। তবে আমি অনেক স্টেশনে চাকরি করেছি কিন্তু এই প্রজাতির খেকশিয়ালগুলো আগে আমার নজরে পড়েনি। আগামী দিনের জন্য এই শিয়ালগুলোকে বংশবিস্তারের জন্য সরকারি ভাবে সংরক্ষন করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
জেলা প্রশাসক মো: হারুন-অর-রশীদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে শিয়ালগুলোর খাবারের ব্যবস্থা করার কোন পদক্ষেপ এই মুহুর্তে নেই। তবে এদের যেন কেউ শিকার না করে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জাগরণ/এমআর