সকাল তখন ৬ টা। হানকুর সেতু পার হয়ে পূর্বে মিনিট দুই পর দেখা মিললো হানকুর নতুন শাপলা-পদ্মবিল রিসোর্ট। চোখ জুড়ানো নয়নাভিরাম শাপলা ফুল দেখে যে কারো চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে। সৃষ্টিকর্তা যেনো নিজেই সাজিয়েছেন মনোমুগদ্ধকর এ শাপলা বিল। শাপলা বিলকে কেন্দ্র করে নতুন শাপলা-পদ্মবিল রিসোর্ট ও পদ্মা-শাপলা রিসোর্ট নামে দুটি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে হানকুর নতুন শাপলা-পদ্মবিল রিসোর্টের শাপলা বিলটা অনেক বড়। শাপলাও এখানে বেশি। শাপলার পাশাপাশি এ বিলে পদ্ম রয়েছে। বিলের পাশে বাঁশের মাচায় মাদুর পেতে বসা মধ্যবয়সী জাহাঙ্গীর হোসেন। মাচায় বসেই কথা হয় তার সঙ্গে। পরিচয় জানতে চাইলে বলেন, শাপলা-পদ্মবিলের একজন মালিক। তিনি বলেন, তারা কয়েকজন মিলে এ শাপলা বিল দেখভাল করেন। রমজান মৃধা হলেন তাদের প্রধান।
কথা প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বর্ষার ৪ মাস এখানে লাল শাপলা ফুটে। লাউয়াল বিল, আড়িয়াল বিল ও পুরাকুরা বিলের প্রায় হাজার বিঘা জমিতে শাপলা ফুল ফুটে। লাল শাপলার পাশাপাশি ফোটে সাদা ও বেগুনি শাপলা। তবে এর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। তিনি বলেন, পর্যটকদের বিলে ঘুরানোর জন্য তার রিসোর্টে ৬ টি নৌকা রয়েছে। এসব নৌকায় প্রতিঘন্টায় ভাড়া হিসাবে ৩০০ টাকা গুনতে হয়। তিনি বলেন, শাপলা বিল দেখতে আসতে হলে সকাল ৭ টার মধ্যে আসতে হবে। সকাল ৯ টার দিকে ফুলগুলো নিভে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, আড়িয়াল ও লাউয়াল নামের মধ্যেই আছে এক অন্যরকম আদিমতা। প্রকৃতির যত সৌন্দর্য তার সবটুকুই আদিমতার মধ্যে। আধুনিকতার আড়ালে আজ অনেক বুনো সৌন্দর্য যেন বিলীন। তবে দাউদপুর এখনো ব্যতিক্রম। শাপলা বিলের ফুটন্ত লাল শাপলা দেখতে হলে যতটা সম্ভব ভোরে পৌঁছতে হবে। সড়কের পাশেই খেয়াঘাট। গাড়ি থেকে নেমেই হুড়মুড় করে নৌকায় বসি। দূর থেকেই চোখে ধরা দেয় লাল শাপলা। ছোট নৌকা এগিয়ে যায়। যতই এগোই, ততই যেন চোখে-মুখে মুগ্ধতা।
এক সময় নিজেকে আবিষ্কার করি বিশাল লালের মধ্যে। লাল শাপলার রাজ্যে নৌকা চলে, আমি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রই। পুরো বিলটিই মনে হয় ফরাসি লাল মখমলে ঢাকা। যুগল ছাড়া তখনো কোনো পর্যটক আসেননি। ফলে বিলের মধ্যে একটা নিঝুম ভাব। মাঝে মধ্যে টুপটাপ মাছের লাফঝাঁপ। লাউয়াল বিলের চারপাশ পুরোটাই নৈসর্গিক।
মাঝি মোত্তাকিন জানালেন, আগে এখানে সাদা ও বেগুনি শাপলা ফুটত। এখন কম দেখা যায়। তিনি ২ বছর ধরে বিলটিতে এ রকম হাজার হাজার শাপলা ফুটতে দেখছেন। আগে তেমন পর্যটক আসতেন না। এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। পদ্ম-শাপলা রিসোর্টের মালিক নুরুল ইসলাম বলেন, শুক্র ও শনিবার লোকসংখ্যা বেশি হয়। অন্যদিন লোক কম হয়। মোহাম্মদপুর থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন মাইদুল ইসলাম সানি। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকার পাশে এতো সুন্দও শাপলা বিল না দেখলে বিশ্বাসই হবে না। এক কথায় অসাধারণ।
রূপগঞ্জের লাল শাপলার বিল পিপাসা মেটাচ্ছে প্রকৃতি প্রেমীদের। রাজধানীর অতি নিকটে হওয়ায় নগর জীবনকে কিছুটা স্বস্তি দিতে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষ প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছেন সেখানে। হেমন্তের প্রকৃতি আরো মোহনীয় করে তুলেছে লাল শাপলার লাবণ্য। এ যেন বাংলা মায়ের আঁচলে জীবন্ত হয়ে ওঠা নকশি কাঁথার মাঠ। দিগন্ত জুড়ে ফুটে আছে লাল শাপলা। সবুজ আর লালে তাই ভোরের জলজ গানে উড়াল দেয় পাখি ও মানুষের মন। শাপলার লাবণ্য ছুঁতে জলের সাথে মিতালী দর্শনার্থীদের। শুধু লাল শাপলা আর পদ্মই না, এই বিল মুখরিত হয় পাখির কলতানে। শালিক, দোয়েল, ফিঙেরাজাসহ অনেক দেশীয় পাখির কলতান মোহময়তা বাড়িয়েছে অপার সৌন্দর্যের। শাপলার বুকে বসে থাকা রঙিন ফড়িং কিংবা দোয়েলের গান আপনার চিত্তে দোলা দিবেই।
কিভাবে যাবেন: রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন সেতু। সেখান থেকে এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক দিয়ে জিন্দা পার্ক হয়ে শাপলা বিল।
জাগরণ/এমআর