
নাসির আহমেদ, দশমিনা প্রতিনিধি
পটুয়াখালীর দশমিনায় খাদ্য বিভাগের আহবানে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রিতে উপজেলার কৃষকদের অনীহা দেখা দিয়েছে। বাজার ও সরকার নির্ধারিত দামের মধ্যে ব্যবধান থাকায় তারা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করছে না। ফলে ঝামেলা এড়াতে বাজারেই ধান বিক্রি করছে।
উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থ বছরে প্রতি মণ ১ হাজার ৮০টাকা দরে উপজেলায় ৮শ’ ৮মেট্রিক টন রোপা আমন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের ৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই ধান সংগ্রহের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোন ধান কিনতে সক্ষম হয়নি উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর।
জানা যায়, এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নেই কোন তৎপরতা। ধান সংগ্রহে ব্যর্থ হওয়ার কারণ হিসেবে সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় বাজারের দামের পার্থক্য, কৃষকদের অসহযোগিতা ও স্থানীয় বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরে আমন ধান ক্রয়ের জন্য উপজেলার কৃষি কার্ডধারী ১ হাজার ৬শ’ ৩৫ জন কৃষকের নামের তালিকা খাদ্য বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার দশমিনা সদর, রণগোপালদী, গছানী, আলীপুরা, বড়গোপালদী ও বগুড়াসহ বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, প্রতি মণ আমন ধান বিক্রি হচ্ছে ১হাজার ১শ’ থেকে ১হাজার ১শ’ ৫০ টাকায়। হাট-বাজারগুলোতে সহজেই ধান বিক্রি করতে পারছে কৃষকরা। তাই লাভ-ক্ষতির হিসাব না করেই বিভিন্ন দৌড়ঝাঁপ ও নিয়মকানুন এড়াতেই কৃষকরা স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে ধান বিক্রি করছেন বলে জানা যায়।
উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের গছানী গ্রামের তালিকাভুক্ত কৃষক আলমগীর হোসেন জানান, গত দুই বছর আগে সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করেছিলাম। তাতে মধ্যস্বত্ত্বভোগকারীদের হস্তক্ষেপ থাকে। সে বছর আমাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। এই বছর ধান নেওয়ার জন্য আমার সাথে কেউই যোগাযোগ করেনি। এ বছর আমি প্রতি মণ আমন ধান ১১৫০ টাকা দরে ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করেছি।
উপজেলার দশমিনা সদর ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব লক্ষ্মীপুর গ্রামের তালিকাভুক্ত কৃষক প্রাণতোষ মন্ডল জানান, সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে বেশি বেশি শুকানো লাগে। তাছাড়া বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে ব্যাংক থেকে টাকা আনতে হয়। এসব ঝামেলা এড়াতে আমি নগদ টাকায় স্থানীয় বাজারে ধান বিক্রি করেছি।
এই বিষয়ে দশমিনা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) ইন্সপেক্টর মো. রাসেল হাওলাদার জানান, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ধানে ১৪% আর্দ্রতা, ০.৫% বিজাতীয় পদার্থ, ৮% ভিন্ন জাতের ধানের মিশ্রণ, ২% অপুষ্ট ও বিনষ্ট দানা এবং ০.৫% চিটা থাকতে পারবে। তাই কৃষকরা এত নিয়ম মেনে ধান বিক্রয়ে আগ্রহী থাকেন না। আমি মাইকিং করিছি। কোন দালালের সাথে নয়, কৃষকদের সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে বলেছি।
এই বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মাদ আব্দুস সালাম জানান, চলতি বছর কৃষকরা বাজারে ধান বিক্রয় করে আমাদের চেয়ে বেশি মূল্য পাচ্ছে। তাই কৃষকরা আমাদের গুদামমুখী হচ্ছে না।
এই বিষয়ে দশমিনা উপজেলা ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি ও ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল কাইয়ূম জানান, কিভাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়, সেই বিষয়ে কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
দৈনিক জাগরণ/আরকে