মোঃ পলাশ রহমান, মহেশপুর প্রতিনিধি
বেড়ার ঘরে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে অন্যের জমিতে স্ত্রী নুরুন্নাহারকে নিয়ে খুপড়িতে ৩০ বছর বসবাস করে আসছেন অসহায় বৃদ্ধ শাহাজাহান হাওলাদার (৮০)।
তাদের ঘরটি প্রথম দেখায় মনে হতে পারে কিছু শুকনো গাছের ডালা-পালা একত্রিত করে রাখা হয়েছে। মেঘলা রাতে বৃষ্টির প্রতিটি ফোটার শব্দ শুনে এবং পোকামাকড়ের সাথেই তাদের রাত কাটে। দুই ধারে পানি, চারি পাশে ভাঙা বেড়া। সাপ, ব্যাঙ আর কেঁচোর সঙ্গে নিত্য যুদ্ধ করতে হয় তাদের। এই হাড় কাঁপানো শীতে হিমেল হাওয়া প্রতিনিয়ত এপাশ ওপাশ করে তাদের ঘরের মধ্যে দিয়ে। এ ঘরটি দেখলেই যেনো চোখে পানি চলে আসে।
এমন পরিবেশে কোন মানুষ কি বসবাস করতে পারে? মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জমি ও ঘর উপহার দিলেও বৃদ্ধ শাহাজানের কপালে জোটেনি সরকারি বরাদ্দের ঘর। জীবন যুদ্ধের মহানায়ক শাহাজাহান আলীর বসবাস ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার মান্দারবাড়ীয়া ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামে।
নিজের কোন জমি নেই। স্ত্রী পরের বাড়িতে, ক্ষেতে কাজ করেন। বয়সের ভারে কাজ করতে না পারা শাহাজাহান পুড়াপাড়া বাজারে সাহায্য তুলে করেন জীবিকার ব্যবস্থা।
সরকারি সহায়তায় ভূমিহীনদের ঘর দেয়ার খবরে জীবনের পড়ন্ত বেলায় মাথা গোজার ঠাঁই পাবার স্বপ্ন দেখেন শাহাজাহান হাওলাদার। তবে সেই স্বপ্ন কখনো বাস্তবে রূপ নিবে কিনা জানেন না তিনি। কারণ তার অসহায়ত্ব মন গলাতে পারবে কি জন প্রতিনিধিদের?
ভূমিহীন অসহায় বৃদ্ধ শাহাজাহান বলেন, আমাদের দেখার মতো কেউ নেই, এক ছেলে আছে সে পাশেই পরিবার নিয়ে থাকে। তারই নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বারদের অনেক বলেছি কিন্তু কোন কাজে আসেনি। এই বয়সেও যদি স্ত্রীকে নিয়ে একটু মাথা গোজার ঠাঁই পেতাম তাহলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হতো। আর কয় দিনই বা বাচবো! আক্ষেপ শাহাজাহান হাওলাদারের।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহিনুর রহমান জানান, সে সরকারি ঘর পাবার যোগ্য, নতুন করে বরাদ্ধ এসেছে কিনা আমার জানা নেই, যদি আসে তাহলে সে অবশ্যই পাবে।
মান্দারবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। তবে শাহাজাহান হাওলাদের ব্যাপারে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে। তাকে দেবার মত জায়গা খুজছি। খুবই তাড়াতাড়ি তাকে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা আনিসুল রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ খবর নিচ্ছি। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের তালিকায় তাকে আনা হবে এবং তাকে জমিসহ বাড়ি উপহার দেয়া হবে।
জাগরণ/আরকে