• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২, ১০:৩২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২, ১০:৩২ এএম

প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহণের পর হত্যা

প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহণের পর হত্যা

নরসিংদীর মনোহরদীতে ব্যবসায়ী মিঠু হত্যার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে পুলিশ। প্রথমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে শাহনাজ আক্তার পপি নামে এক নারী। পরে তাকে অপহরণ করে মুক্তিপন দাবি করা হয়। অপহরণের পর মুক্তিপন না পেয়ে হত্যা করা হয় সিরাজগঞ্জের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ও কাপড় ব্যবসায়ী মো: মিঠু হোসেনকে।

আর এই ঘটনার ৪ দিনের মাথায় ওই নারী ও তার স্বামীসহ তিন ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে বলে দাবি জেলা পুলিশের।

রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকালে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) মনোহরদী থেকে অজ্ঞাতনামা পরিচয় হিসেবে মিঠু হোসেন (২৪) এর লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ।

পুলিশ সুপার জানায়, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রায়পুর রেলওয়ে কলোনীর মুসলিম উদ্দিনের ছেলে মো: মিঠু হোসেন অনলাইনে শাড়ি কাপড়ের ব্যবসা করতেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হওয়া দুই বন্ধুর ভরসায় নরসিংদীর সেখেরচর বাবুরহাটের শাড়ির ব্যবসা বিষয়ে ধারনা নিতে বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সিরাজগঞ্জ থেকে নরসিংদীতে আসেন তিনি। 

কাজী আশরাফুল জানান, নরসিংদী পৌঁছে এদিন সন্ধ্যায় মিঠু পরিবারের সাথে ফোনে কথাও বলেন। পরে রাতেই মিঠুর মোবাইল থেকে কল দিয়ে কয়েকজন অপরিচিত লোক জানান, তারা মিঠুকে অপহরণ করেছে। এসময় পরিবারের কাছে মুক্তিপন হিসেবে ১ লাখ টাকা দাবি করা হয়। রাতে মিঠুর মোবাইল থেকে পরিবারের সদস্যদের সাথে প্রায় ৫০ বারের মত কথা বলার পর মোবাইলটি বন্ধ হয়ে যায়। 

পরদিন বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে মনোহরদীর একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের হুগলিয়াপাড়া এলাকার একটি খড়ের গাদার পাশ থেকে অজ্ঞাত হিসেবে মিঠুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

উদ্ধারের খবর পেয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে মনোহরদী থানায় গিয়ে ছবি দেখে মরদেহটি মিঠুর বলে শনাক্ত করেন তার পরিবারের সদস্যরা। পরে এই হত্যার রহস্য উদঘাটনে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মাঠে নামেন নরসিংদী জেলা পুলিশ।

রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে নরসিংদীর পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম জানান, মিঠুকে অপহরণ ও হত্যায় জড়িত সন্দেহে রবিবার ভোরে গাজীপুরের শ্রীপুর ও নরসিংদীর শিবপুর থেকে শাহনাজ আক্তার পপি ও তার স্বামী আব্দুল বাতেন ও কাকন খান নামের তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, পপির সাথে ফোনে কথা বলা ও ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ করা হয়। পরে মুক্তিপণ দাবি করে না পেয়ে হত্যা করে লাশ গুম করার চেষ্টা করে। এই ঘটনায় জড়িত তার স্বামীসহ সহযোগী প্রতারক চক্র। এই চক্রের মূল হোতা হানিফ নামে আরও একজন বলে জানায় কথিত প্রেমিকা।

কাজী আশরাফুল আজীম আরও জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরের মিঠালু এলাকার শাহনাজ আক্তার পপি ও তার স্বামী আব্দুল বাতেন, শিবপুরের দুলালপুরের আশুটিয়া এলাকার কাকন খানসহ ৩/৪ জনের একটি প্রতারক চক্র রয়েছে। এই চক্রের দলপতি হিসেব শাহনাজ আক্তার পপি নিজের ছদ্মনাম ব্যবহার করে সুন্দরী মেয়েদের ছবি ব্যবহার করে একাধিক ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে। এসব আইডিতে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও আপলোড করে বিভিন্ন লোকজনকে টার্গেট করা হতো।

তিনি জানান, এভাবে বিভিন্ন লোকদের ফ্রেন্ডরিকুয়েস্ট পাঠিয়ে প্রথমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পরে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় দেখা করার প্রস্তাব দেয়া হতো। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে কেউ এগিয়ে আসলে তাকে আটক করে মারধর ও মুক্তিপণ দাবি করাই হল এই চক্রের কাজ। এরই ধারাবাহিকতায় পপির প্রেমের ফাঁদে পড়ে সিরাজগঞ্জের মিঠু হোসেন। পপি ও তার সহযোগী প্রতারক চক্রের মাধ্যমে মিঠু হোসেনকে অপহরণ করে শিবপুরের আশুটিয়ার অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটক করে। পরে মোবেইলে তাদের দাবিকৃত মুক্তিপণ না পেয়ে প্রতারক চক্রের সদস্যদের হাতে আশুটিয়া এলাকায় খুন হয় মিঠু। লাশ গুম করতে মনোহরদী উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের হুগলিয়াপাড়া এলাকার একটি খড়ের গাদার পাশে রাখা হয়।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত শাহনাজ আক্তার পপি, তার স্বামী আব্দুল বাতেন ও কাকন খান নামে প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করার পর বাকী সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম।

জাগরণ/আরকে