যমুনার সিবিএ নির্বাচনকে সামনে রেখে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দু' গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের ৩০ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহতদের জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে জামালপুরের সরিষাবাড়ির তারাকান্দিতে যমুনা সারকারখানা এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার বিকাল সংঘর্ষের সুত্রপাত হয়। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সিবিএ নির্বাচন সামনে রেখে সারকারখানা এড়িয়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বেশ কদিন ধরে আওয়ামীলীগের মানিক ও রফিক গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিতে মশিউর রহমান মোর্শেদের নেতৃত্বে রফিক গ্রুপের ক্যাডাররা বুধবার বিকেলে তারাকান্দি শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে মানিক গ্রুপের যুবলীগ কর্মী খোকন মিয়াকে (৩৫) বেধড়ক পেটায়। খবর পেয়ে মানিক গ্রুপের ক্যাডাররা রফিক গ্রুপের কামরুজ্জামান (৪০) কে মারধর করে। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। পরে খোকন ও কামরুজ্জামানকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে রাত থেকে রফিকের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুনরায় অবস্থান নিলে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সকালে উভয়পক্ষের ক্যাডাররা সংঘর্ষে জড়িযে পড়ে। পাল্টাপাল্টি হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। এসময় এসআই ফয়জুর রহমান, এসআই সোহাগ, এএসআই আবু শামা, সংবাদকর্মী রাইসুল ইসলাম ও সোহেল রানা আহত হন। এছাড়া স্থানীয় আনিসুর রহমান (৪০), সাইফুল ইসলাম (৩২), মো. মণ্ডল (২৫), শফিকুল ইসলাম (৩০), মিন্টু মিয়াসহ (৩০) উভয়পক্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়। কারখানা এলাকায় উভয় পক্ষের ক্যাডারদের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
কারখানার শ্রমিক-কমর্চারি ইউনিয়নের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান জানান, আসন্ন সিবিএ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে একটি পক্ষ এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। প্রশাসন কঠোর না হলে নির্বাচনে বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে।
তারাকান্দি ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম মানিক অভিযোগ করেন, সিবিএ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রফিকুল ইসলাম প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। বিএনপি থেকে আসা তার ক্যাডার মোর্শেদকে দিয়ে এলাকায় হামলা ও ভীতি সঞ্চার করায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, সারকারখানার পরিবহন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এমপির লোকজন সাধারণ শ্রমিকদের মারধর করে। শ্রমিকরা পরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তার লোকদের ওপর গুলিবর্ষণ করায় কয়েকজনকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে তার লোকজনকে দায়ী করা হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জামালপুরের এএসপি (সদর সার্কেল) মো: জাকির হোসেন সুমন জানান, যমুনা সারকারখানার সিবিএ'র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
জাগরণ/আরকে