ভাষা-সংস্কৃতি, ধর্ম-বর্ণসহ নানা সংস্কার ও ভেদাভেদ ভুলে শুধু প্রেমের টানে সুদূর জার্মানি থেকে বাংলাদেশে এসেছেন এক তরুণী। তার নাম আলিসা থেওডোরা পিত্তা। ধর্মত্যাগ করে বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের রাকিব হোসেন শুভ সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।
শুক্রবার (৬ মার্চ) বিকালে নববধূকে নিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন শুভ। শনিবার সকালে হেলিকপ্টারে বরিশালে যান। বিদেশি বধূ নিয়ে আসার খবর পেয়ে দলবেঁধে তাদের দেখতে এসেছেন গ্রামবাসী। পরে নববধূকে ফুল দিয়ে বরণ করেন শুভর স্বজনরা।
জানা গেছে, প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে জার্মানির তরুণী আলিসাকে বিয়ে করেন শুভ। তবে সেখানে বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়নি। এ জন্য বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গ্রামের বাড়িতে এসেছেন। সেখানে বৌভাত ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন তারা।
শুভ বরিশালের চরবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলামের ছেলে। ২০১১ সালে ইতালি যান রাকিব। পরবর্তীতে সেখান থেকে জার্মানিতে যান। সেখানে স্থানীয় বেইলি ফিল্ড ডায়ালন্ড্রোভ এলাকার বাসিন্দা আলিসা থেওডোরা পিত্তার সঙ্গে পরিচয় হয়। আলিসা পেশায় নার্স। তার বাবা ও মা সেখানে চাকরিজীবী।
শুভ বলেন, গত বছরের ৫ মার্চ এলিসা ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে আলিসা বেগম হিসেবে আমার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। শনিবার আমাদের বিবাহবার্ষিকী। তাই শুক্রবার জার্মানি থেকে রওনা হয়ে বাংলাদেশে আসি। শনিবার সকালে পৌঁছাই বরিশাল বিমানবন্দরে। এরপর হেলিকপ্টারে আলিসাকে নিয়ে বাড়ি ফিরি। আলিসার সঙ্গে এসেছে তার বান্ধবী লেইসা।
তিনি বলেন, জার্মানিতে একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় প্রায়ই আলিসার সঙ্গে দেখা এবং কথা হতো। এভাবে কিছু দিন চলার পর আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে সম্পর্ক চলে অনেকদিন। দুজনই বুঝতাম, আমাদের মধ্যে ভালোবাসা জন্ম নেওয়ার বিষয়টি। কিন্তু প্রস্তাব কে আগে দেবে, এটি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। বিষয়টি মাথায় রেখে দুজন-দুজনকে আরো বোঝার চেষ্টা করলাম। যখন বুঝলাম, আলিসা আমাকে মনেপ্রাণে চায়। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম প্রস্তাব দেওয়ার।
শুভ বলেন, আমরা বিয়ে করেছি বিদেশে। সেখানে আমাদের সমাজের যে রীতিনীতি ও উৎসব তা পালন করতে পারিনি। আমাদের দেশের বিয়েতে যতটা উৎসব হয়, তাও হয়নি। আমি চাই, নতুনভাবে বিয়ের উৎসব করতে। আলিসাও আমাদের দেশের বিয়ের অনুষ্ঠান দেখে মুগ্ধ হয়েছে। সেও চাচ্ছে, এ দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী বিয়ের উৎসব হোক। আমার এবং আলিসার আবদারে আমার বাবা-মা ও স্বজনরা নতুনভাবে বিয়ের উৎসবের আয়োজন করেছেন। আগামী ৯ মার্চ হবে আমাদের গায়ে হলুদ। ১০ মার্চ গ্রামবাসীর জন্য বউভাতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
শুভর বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, ছেলে বিদেশে বিয়ে করেছে, সেখানেই থেকেছে এতদিন। অনেকদিন পর পুত্রবধূকে নিয়ে দেশে ফিরেছে। গ্রামবাসী ও আত্মীয়-স্বজনকে ছেলের বিয়েতে দাওয়াত দিতে পারিনি। এ জন্য গায়ে হলুদ ও বউভাতের আয়োজন করেছি। তাদের বিয়েতে আমি অনেক খুশি।
জাগরণ/আরকে