• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২২, ১০:০৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ১২, ২০২২, ১০:০৩ এএম

নাব্যতা সংকটে বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর  

নাব্যতা সংকটে বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর  

মোনায়েম খান
সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ নৌ-বন্দর। যমুনা নদীতে শুস্ক মৌসুমে পানি কমতে থাকায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরে। এতে বন্দরে ভিড়তে পারছে না পন্যবাহী বড় জাহাজ। এতে করে প্রায় ১৫-২০ টি জাহাজ বিভিন্ন স্থানে আটকে আছে। ফলে ছোট ছোট লাইটারেজ জাহাজে করে পন্য আনতে হচ্ছে আমদানিকারদের। বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে সঠিকভাবে নৌ চ্যানেল খননের দাবি তাদের। অপরদিকে স্থানীয় প্রশাসন বলছে বন্দরের কাজ স্বাভাবিক রাখতে নদীতে ড্রেজিংসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

প্রতিদিন চট্রগ্রাম, খুলনা, মংলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সার, কয়লা, সিমেন্ট, জ্বালানী তেলসহ বিভিন্ন পন্যসামগ্রী নিয়ে জাহাজ আসে এই বন্দরে। তবে শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই নদীতে দ্রুত পানি কমতে থাকায় দেখা দিয়েছে নাব্যতা। স্বাভাবিকভাবে নদীতে বড় জাহাজ চলাচলে ১০ থেকে ১২ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন হলেও বর্তমানে পানি আছে ৭ থেকে ৮ ফুট। ফলে গত এক মাস ধরে বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরে ভিড়তে পারছে না বড় কোনো জাহাজ। 

জাহাজ চালকেরা বলছে, দৌলদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় আটকে যাচ্ছে বড় জাহাজগুলো। ফলে বাধ্য হয়ে ছোট ছোট লাইটারেজ ও কার্গোতে করে পন্য বন্দরে আনতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। এতে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ি ও ঘাট ইজারাদারদের। আর বন্দরে বড় জাহাজ ভিড়তে না পারায় কাজও কমে গেছে বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের। 

একাধিক জাহাজের চালক ও শ্রমিকদের অভিযোগ নদীর যে অংশে ড্রেজিং করা হচ্ছে তাতে বন্দর এলাকায় তেমন একটা উপকার হচ্ছে না। ড্রেজিং কাজটি যদি নিয়মিত মনিটরিং হতো তাহলে বন্দর এলাকায় জাহাজ সহজেই ভিড়তে পারতো।

বাঘাবাড়ি ঘাট ইজারাদার আব্দুস সালাম ব্যাপারি জানান, পানি কম থাকার কারণে জাহাজ বন্দরে ভিড়তে না পারায় ইজারাদার, শ্রমিক ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানসহ সকলেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলার জন্য একমাত্র এই বন্দরই ভরসা হলেও কর্তৃপক্ষের তেমন কোন নজর নেই। আমরা চাই দ্রুত গতিতে এই বন্ধরের নাব্যতা ফেরাতে কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেবেন।

ব্যবসায়িদের সুবিধা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যকর করতে এবং বন্দরের নাব্যতা সৃষ্টি করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে জোর দাবি জানিয়ে সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট আবু ইউসুফ বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে আসা জাহাজগুলোকে সরাসরি বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর ঘাটে ভিড়াতে সারাবছর এটিকে ড্রেজিং এর আওতায় রাখতে হবে। অন্যথায় ব্যবসায়িদের মাথায় হাত। তারমতে জ্বালানী তেল, সার, বীজ, রড়, সিমেন্ট, ক্লীংকারসহ সবধরনের কৃষিপণ্য প্রায় এই বন্দর দিয়ে উত্তরের ১৬টি জেলায় যায়। তাই ঘাটকে সচল রাখতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ মন্ত্রনালয় যদি প্রতি নিয়ত ড্রেজিং কাজ সচল রাখে তাহলে ঘাটে জাহাজ ভিড়তে সমস্যা হবেনা। এতে কৃষি প্রবণ উত্তরের সকল জেলার কৃষক তাদের চাহিদা মতো পণ্য কিনতে পারবে। আর ব্যবসায়িরা অল্প খরচে তাদের পণ্য পরিবহণ করতে পারবে। 

বাঘাবাড়ি বন্দরে প্রথম শ্রেনীতে উন্নীত করার জন্য কর্তৃপক্ষকে পত্র দেয়া হলেও তেমন কোন সারা ফেলেনি এমন অভিযোগ করে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো: সামসুজ্জোহা বলেন, বাঘাবাড়ি নৌ বন্দর একটি পুরাতন এবং সব ধরনের অবকাঠামো থাকা সত্বেও অবহেলিত। কর্তৃপক্ষকে এনিয়ে পত্র দেয়া হলেও তার কোন সদুত্তোর পাওয়া যায়নি। 

উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার জন্য সার, কায়লা, সিমেন্ট, চাল, গমসহ বিভিন্ন পন্য নিয়ে আসা হয় এই বন্দর দিয়ে। এছাড়া পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নামে ৩ টি জ্বালানী তেলের ডিপো রয়েছে এই বন্দরে। তাই এই বন্দরে আধুনিক ও প্রথম শ্রেনীতে উন্নীত করাসহ সকল প্রকার পণ্য পরিবহণ ও লোড-আনলোডিং সহজ করতে কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন এমনটাই দাবি সচেতন মহলের।

জাগরণ/আরকে