লক্ষ্মীপুরে মো. আরব নামে এক পুরাতন মোটরসাইকেল ব্যবসায়ীকে চোর সাজিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। মোটরসাইকেল ক্রয়ের কাগজপত্র সঠিক থাকলেও অদৃশ্য কারণে পুলিশ হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ২ মাস ১০ দিন কারাগারে থাকার পর এখন তিনি মামলা থেকে অব্যহতির জন্য আদালতে ঘুরছেন।
রোববার (২০ মার্চ) দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী অঞ্চল রায়পুর আদালতের বিচারক তারেক আজিজ চার্জশীটের ওপর ঘটনাটির শুনানি করেন।
আরবের আইনজীবী এবিএম মারুফ বিন জাকারিয়া বলেন, আদালতের বিচারক মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেসটিগেশন নোয়াখালী আঞ্চলিক কার্যালয়েকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন। আগামি ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আরবের নামে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র সব সঠিক রয়েছে।
এ ঘটনায় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রায়পুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অসীম চন্দ্র ধর ব্যবসায়ীর পক্ষেই আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি আদালতে চার্জশীট জমা দেন।
চার্জশীট সূত্র ও অসীম চন্দ্র ধর বলেন, গ্রেফতার হওয়ার সময় আরব ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের একটি মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। মামলার চারদিন পর তিনি মোটরসাইকেলের সাবেক মালিক মো. বাবুলকে দিয়ে নোটারির মাধ্যমে ব্যাক ডেইট দিয়ে ও ওভার রাইটিং করে আরব মালিকানাধীন পরিবর্তন করান। এতে তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়।
এদিকে মালিকানা নিশ্চিতে বিআরটিএ’র লক্ষ্মীপুরের সহকারী উপ-পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এনায়েত হোসেন মিন্টুও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ওই মামলায় উল্লেখ করা হয়, আরব উপজেলার উত্তর চরবংশী খাসেরহাটের জায়ান মেডিসিন কর্ণারের ভেতর বিক্রির উদ্দেশ্যে তিনটি মোটরসাইকেল মজুদ রাখে। ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট খবর পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে রায়পুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাসিম উল হক মোটরসাইকেলগুলো উদ্ধার করেন। এসময় আরব পালাতে গেলে স্থানীয়দের সহযোগীতায় পুলিশ তাকে আটক করে। তখন মালিকানা সম্পর্কে জানতে চাইলে আরব সন্তোজনক জবাব দিতে পারেনি।
আরবসহ তার লোকজন বিভিন্ন জেলা থেকে মোটরসাইকেলগুলো চুরির পর বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুদ রাখে। পরদিন এসআই নাসীমের দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আরবকে লক্ষ্মীপুর আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
ভূক্তভোগী আরব উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের চরবংশী গ্রামের খাসেরহাট এলাকার মৃত মানিক মাঝির ছেলে।
আরবের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গেল বছর ১৫ আগস্ট মোটরসাইকেলগুলো জব্দ করে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। গাড়ি নেওয়ার সময় তিনি ঘটনাস্থল উপস্থিত ছিলেন। তখন আরবকে থানায় কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য বলে পুলিশ। রাতেই থানায় কাগজপত্র নিয়ে আরব থানায় যায়। এরপর এসআই নাসিম কাগজপত্রগুলো জব্দ করে তাকে আটক করে রাখে। কিন্তু পুলিশ তাকে ১৬ আগস্ট আটক করেছে বলে উল্লেখ করে। প্রায় ২ মাস ১২ দিন কারাগারে থাকার পর উচ্চ আদালত থেকে একই বছর ২৭ অক্টোবর আরব জামিনে মুক্ত হন। এরপর মোটরসাইকেলগুলোর জন্য থানায় গেলে পুলিশ কাগজপত্র জব্দ করার বিষয়টি অস্বীকার করে।
এরমধ্যে দুটি মোটরসাইকেল আমার নামে রেজিষ্ট্রেশন করা। অন্য একটি মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশনের জন্য ব্যাংক ড্রাফট জমা দিয়ে বিআরটিএতে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
মো. আরব বলেন, গ্রেফতারের ১০-১২ দিন আগে আমি বাবুলের কাছ থেকে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে মোটরসাইকেলটি ক্রয় করি। কারাগারে যাওয়ার পর পরিবারের লোকজন বাবুলকে দিয়ে লক্ষ্মীপুর আদালতের মাধ্যমে আমার নামে নোটারী স্ট্যাম্প করেন। মামলাটির কারণে আমি আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
এ ব্যাপারে রায়পুর থানার এসআই নাসিম উল হক বলেন, আমি মামলার বাদী। তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদনে কি উল্লেখ করেছেন তা আমার জানা নেই।
জাগরণ/আরকে