আলী হোসেন
ভোলায় সরকারি নিষেধাজ্ঞার প্রায় মাসের কাছাকাছি পেড়িয়ে গেলেও এখনো সরকারি সহয়তা পায়নি সকল জেলেরা। ইলিশের অভয়াশ্রমের কারণে দুই মাসের জন্য মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এই নিষেধাজ্ঞা চলাকালে নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে সরকারি বরাদ্দ থেকে চাল বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞার ২৩ দিন পার হতে চললেও ভোলা দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ডে জেলেদের ভাগ্যে জোটেনি সেই চাল।
সরেজমিনে গিয়ে নাছির মাঝির সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রাচীনকাল থেকেই মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন ভোলার প্রায় ৩ লাখ জেলে। ইলিশের অভয়াশ্রম হওয়ায় ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ভোলার চরপাতা থেকে চর পিয়ালের শাহবাজপুর চ্যানেলে মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার এবং ভেদুরিয়া থেকে চর রুস্তম পর্যন্ত তেতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এর ফলে নদীতে মাছ শিকার বন্ধ রেখেছেন জেলেরা। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার ২৩ দিন পার হতে চললেও আমাদের ভাগ্যে মেলেনি সরকারি বরাদ্দের চাল।
অন্যদিকে, এ সময়েও ভোলার জেলেদের কাছ থেকে বিভিন্ন এনজিওর কিস্তি আদায় চলমান থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা। জেলেরা বলছেন, এখনো সরকারি বরাদ্দের চাল না পাওয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে তাদের।
ভোলা দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের ৬ ওয়ার্ডের বাসিন্দা জেলে মো. চান্দু মাঝি বলেন, সরকার মাছ ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দিছে। আমরা গত ২৩ দিন ধরে নিষেধাজ্ঞা পালন কইরা নদীতে মাছ ধরতে যাই না। কিন্তু আমাদের নামে সরকার যে চাল বরাদ্দ করছে তা এখনো পাইনি। নিষেধাজ্ঞার কারণে কোনো আয়-রোজগার নাই। ঘরে বউ পোলাইন আছে, কিন্তু ঘরে আইজ চাল নাই। খুবই কষ্টে দিন কাটাইতেছি। কবে সরকারি চাল পাবো সে অপেক্ষায় আছি।
মো. কবির মাঝি বলেন, আমি জেলে। মাছ ধরার কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ জানি না। জেলের কাজ করতে গিয়া দুইটা এনজিওর থেকে ঋণ নিছি। প্রতি মাসে ৮০০০ হাজার টাকা কিস্তি চালাইতে হয়। কিন্তু দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা চলায় নদীতে গিয়া মাছ ধরতে পারি না। এখন কিস্তি চালামু কেমনে। সরকার তো দুই মাসের জন্য এনজিওর কিস্তি আদায় বন্ধ করে নাই। দুই মাসের জন্য এনজিওর কিস্তি আদায় বন্ধ না হইলে কিস্তি পরিশোধের জন্য পালাইয়া নদীতে মাছ ধরতে যামু।
ভোলা সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জামাল হোসাইন বলেন, জেলেদের নামে বরাদ্দের চাল দ্রুত বিতরণের জন্য আমরা বলেছি। আশা করি ২৪/২৫ দিনের মধ্যে জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করা হবে। দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের কাছ থেকে এনজিওর কিস্তি আদায় বন্ধ রাখতে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন জেলে নিবন্ধন চলমান রয়েছে। যেসব জেলেদের নিবন্ধন নেই, তাদের অফিসে এসে নিবন্ধন করে নিতে বলা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলার সাত উপজেলায় প্রায় ৩ লাখ জেলে থাকলেও এখন পর্যন্ত সরকারি নিবন্ধিত জেলে আছেন প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার। তাদের মধ্যে এবছর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞায় সরকারি চাল পাবেন ৯২ হাজার ৬৬১ জন জেলে।
জাগরণ/আরকে