নির্মল এস পলাশ
জলবায়ুর প্রভাবে ও প্রচন্ড খরায় পানির স্তর কমে যাওয়ায়, বিশুদ্ধ পানি সংকট পড়েছেন হাজার কমলগঞ্জ গ্রামবাসী। বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে ছড়ার পানি ব্যবহার করছেন অনেক পরিবার। স্থানীয় জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরও পানি সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেছে।
মৌলভীবাজার কমলগঞ্জে মুন্সিবাজার, পতনউষার, আলীনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় নলকুপগুলো প্রায় ২০ দিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। ১৬০/২০০ ফুটের গভীরতার টিউবওয়েলগুলাতে বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে।
প্রচন্ড খরায় পুকুর খাল বিল শুধু নয়, খরস্রোতা ধলাই নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় বাড়ি ঘর স্থাপিত অগভীর নলকুপগুলাতে প্রায় এক মাস যাবত পানি উঠছে না। বেশি সংকটে মুন্সিবাজার এলাকায়। ওই এলাকার গভীর নলকুপ পানি পেলেও অগভীর ১৬০/২০০ ফুটের গভীরতার নলকুপে চাপ দিয়েও পানি উঠানো সম্ভব হচ্ছে না। একেবারে পানি নেই। ফলে বিশুদ্ধ পানি সংকট হাজারো গ্রামবাসী।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলায় মুন্সিবাজার,পতনউষার ইউনিয়নের রামচদ্র পুর, মহেষপুর, রামেশ্বরপুর, রাজদিঘীর পার, উবাহাটা, রাজটিলা, সরইবাড়ি গ্রামসহ প্রায় ৫০ গ্রামে অতীতে পানির এমন সংকট দেখা দেয়নি।
সংগৃহীত তথ্যে উপজেলার মুন্সিবাজার ৫০, পতনউষার ২০, আলীনগর ১০, কমলগঞ্জ সদর ৫০ কমলগঞ্জ পৌরসভা ১০, রহিমপুর ইউনিয়ন ২০ সহ প্রায় ২৫০/২৫০টি নলকুপ অকাজো অবস্থায় রয়েছে। পানি উঠছে না।
কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের নারায়নক্ষত্র গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, তাদের বাড়ির নলকুপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ১৫ দিন ধরে বিশুদ্ধ পানি সংকটে দুর্ভোগে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তাছাড়া নৃত্যদিনের গোসল ও বাথরুমের পানিরও তীব্র সমস্যা। তারা আরো জানান, আশপাশের গ্রামের প্রায় ৫০/ ৬০টি বাড়িতে একই অবস্থা। পানি আসছে না নলকুপে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বোরো আবাদ চাষাবাদের জন্য একাধিক গভীর নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে। যার গভীরতা ৫ থেকে ৭শত ফুট। দিনরাত পানি ব্যবহার করায় পানির স্তর কমে গেছে। এতে করে সাধারণ নলকুপ যার গভীরতা ১৫০/১৬০ ফুট বা তার উপর ওইসব নলকুপে পানি উঠেছে না বলে জানান।
কমলগঞ্জ সদর ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান সুলমান হাসান ভুটা জানান, রাজটিলা, সরইবাড়ি এলাকায় ১০ বাড়িতে নলকুপে পানিরস্তর কমে যাওয়ায় পানি নেই। পুরো ইউনিয়নে হিসাব করলে অধর্শতাধিক নলকুপ পাওয়া যাবে পানির কারণে নলকুপ অকাজো।
মুন্সীবাজার ইউপি সদস্য সুনীল মালাকার তার এলাকায় পানি সংকটর কথা স্বীকার করে বলেন, রামপুর, রামচদ্রপুর, নারায়নক্ষত্র ও রায়নগর গ্রামসহ অধিকাংশ এলাকায় নলকুপে পানি উঠছে না। আমার বাড়ির নলকুপও পানি না উঠছে না। এমন সংকট কতদিন চলবে তা বলা যাচ্চ্ছে না।
মুন্সিবাজার ইউপি চেয়ারম্যান নাহিদ আহমদ তরফদার বলেন, বোরো আবাদে গভীর নলকুপ বসানোর কারণে হয়তো পানির স্তর কমে যাওয়ায় তার ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৫০/৬০টি নলকুপে পানি না উঠার খবর পেয়েছেন।
কমলগঞ্জ উপজলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী সুজন সরকার পানি সংকটর কথা স্বীকার করে বলেন, মুন্সিবাজার, পতনউষার নলকুপে পানি উঠছে না। অন্যান্য এলাকা হতে অভিযাগ এসেছে। খরায় পানিস্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এমন হচ্ছে। সরজমিন গিয়েছি। বৃষ্টিপাত হলে কিছুটা সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করছেন।
তবে বোরো ক্ষেতের জন্য গভীর নলকুপ বসানোর কারনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি।
জাগরণ/আরকে