
তাহিরপুর প্রতিনিধি
উজান ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালী বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে প্রায় তিন হাজার একর জমির ফসল। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জয়পুর, গোলাবাড়ি, মন্দিয়াতা, রংচি, রূপনগরসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা।
শনিবার (২ এপ্রিল) সকালে পাহাড়ি ঢলে বাঁধটি ভেঙে গেছে। সরেজমিনে জানা গেছে, প্রতিবছর কৃষকদের উদ্যোগে বাঁধটি মেরামত করা হয়। তবে এবার বাঁধটি মেরামত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন বলছে, নদীর পানি বাড়লে প্রথম ধাক্কায় যেন ফসল তলিয়ে না যায়, সেজন্য টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালী, নাওটানা ও গনিয়াকুড়ি বাঁধ মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড আট লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে বাঁধটি করা হয়।
এর আগে ২৯ মার্চ বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। পরে স্থানীয় কৃষকদের চেষ্টায় বাঁধটি এতদিন রক্ষা পায়। কয়েকদিনের প্রাণপণ চেষ্টায় রক্ষা করা যায়নি নজরখালী বাঁধটি।
টাঙ্গুয় হাওরপাড়ের গোলাবাড়ি গ্রামের খসরুল আলম জানান, হাওরে ২৪ হাজার ৭০৩ একর জলাভূমি থাকলেও চাষাবাদের জমি রয়েছে তিন হাজার একর। জমিটির মালিক হচ্ছেন তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের কৃষকরা।
এর আগে গেল কয়েকদিন দিনরাত তাহিরপুরের গোলাবাড়ি ও জয়পুর গ্রামের লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতের কাজ করেছেন। শনিবার সকালে বাঁধটি ভেঙে যায়।
টাঙ্গুয়ার হাওর কেন্দ্রীয় সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ কবির বলেন, অন্যান্য বাঁধের চেয়ে এই বাঁধে বরাদ্দ কম ছিল। তাই বাঁধে মাটি পড়েনি বেশি। একারণেই ভেঙে গেছে।
হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, পিআইসি গঠনের নীতিমালা না মানার কারণে আজকে নজরখালী বাঁধ ভেঙে গেছে। শত শত অপ্রয়োজনীয় বাঁধ দিয়ে সরকারি টাকা লোপাট করা হচ্ছে। আর একটি প্রয়োজনীয় বাধ কৃষকদের আবেদন করতে হয়। তারপর প্রশাসন দায়সারা কাজ করবে। এটা আমরা মানতে পারছি না। আজকে যেসব কৃষক ফসল হারিয়েছে তাদের কি হবে? এই দায় প্রশাসনকে নিতে হবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবীর বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নকশা প্রাক্কলনবহির্ভূত টাঙ্গুয় হাওরের এই নজরখালী বাঁধ। স্থানীয় কৃষকরা প্রতিবছর নিজেদের উদ্যোগে বাঁধটি নির্মাণ করে। তবে এবার কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড আট লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে বাঁধটি নির্মাণ করে। সেটি ভেঙে গেছে। এতে তাহিরপুর অংশে প্রায় ছয় থেকে সাতশ বিঘা জমি তলিয়ে গেছে।
জাগরণ/আরকে