• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২২, ০১:৩১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ৮, ২০২২, ০১:৩১ পিএম

হিজাব পড়ায় ২০ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত শিক্ষিকার

হিজাব পড়ায় ২০ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত শিক্ষিকার

নওগাঁর মহাদেবপুরের দাউল বারবারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে হিজাব পড়ে স্কুলে আসার অপরাধে ২০ ছাত্রীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের হিন্দু ধর্মের অনুসারি শিক্ষিকা আমোদিনি পাল।

বুধবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। 

পিটুনি খেয়ে ছাত্রীরা স্কুল ছেড়ে বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি তারা তাদের অভিভাবকদের জানালে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। এঘটনায় অভিভাবকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এর জের ধরে শতাধিক অভিভাবক বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে ওই স্কুলে গিয়ে এর প্রতিবাদ জানান। এসময় অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে না পেয়ে তারা স্কুলের আসবাবপত্র ভাংচুর করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের দুটি ভ্যান ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

নির্যাতনের শিকার ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আফরিন অভিযোগ করে বলেন, বুধবার দুপুরে জাতীয় সঙ্গীতের পর লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনি পাল কেন হিজার পড়ে স্কুলে এসেছে এ কথা জিজ্ঞাসা করে ইউক্যালিপ্টাস গাছের ডাল দিয়ে তাদেরকে প্রহার করেন। শিক্ষিকা তাদেরকে জানিয়ে দেন যে, ‘স্কুলে কোন পর্দা চলবে না। ঢং করে আসছো। বাসায় গিয়ে বোরখা পড়ে থাকো। যখন তোমরা মহাদেবপুর বাজারে যাবে তখন পর্দা করবে। স্কুলে আসলে মাথার কাপড় ফেলে আসবে।’

তিনি ছাত্রীদের হিজাব খুলে ফেলার জন্য টানাটানি করেন। এমনকি যারা হিজাব ছাড়া শুধু মাস্ক পড়ে এসেছিল তাদের মাস্কও খুলে দেন। তিনি হুমকি দেন যে, কাল থেকে যদি হিজাব ও মাস্ক পড়ে আসো তাহলে পিটিয়ে তোমাদের পিঠের চামড়া তুলে নেয়া হবে।

শিক্ষার্থী সাদিয়া আরও জানায়, লাইনের কয়েকজন ছাত্রীকে মারতে মারতে তার কাছে এসে তাকে মারতে থাকলে লাঠি ভেঙ্গে যায়। অন্যদের মধ্যে দশম শ্রেণির ছাত্রী ঐশি, সুমাইয়া, তিথি, লাকি, নবম শ্রেণির মোনাসহ কমপক্ষে ২০ ছাত্রীকে পিটানো হয়।

সাদিয়ার মা সাবেরা বেগম বলেন, তার মেয়ে স্কুল থেকে এসে কান্নাকাটি করে হিজাব পড়ার জন্য ম্যাডাম মেরেছে বলে জানায়। তিনিও বলেন, আমাদের মেয়েরা বড় হয়েছে। তারা তো পর্দা করবেই। স্কুলে গিয়েই ভদ্রতা শিখবে। তা না শিখিয়ে যদি এরকম মারপিট করে তাহলে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা কোথায়? তিনি তাদের সন্তানদের নিরাপত্তার স্বার্থে অভিযুক্ত শিক্ষিকার অপসারণ দাবি করেন।

দশম শ্রেণির আরেক ছাত্রী উম্মে সুমাইয়া আকতারের মা মরিয়ম নেছাও জানালেন একই কথা। তার মেয়ে সুমাইয়া ও তার ক্লাসমেট তিথি জাতীয় সঙ্গীতের পর স্কুলে গেলে তারা কেন হিজাব পড়ে স্কুলে গেছে সেই অপরাধে শিক্ষিকা আমোদিনি পাল তাদেরকে পিটানোর জন্য শিক্ষক বদিউল আলমকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে বাদিউল মাস্টার সুমাইয়া ও তিথিকে লাঠি দিয়ে পিটায়। এই ঘটনার পর তার মেয়ে ক্লাস না করে বাড়ি এসে কাঁদতে থাকে।

অভিভাবকেরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা স্কুল ঘেরাও করেন। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষিকা এদিন স্কুলে আসেননি। একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার তৎপরতা চালাচ্ছেন। ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে ছাত্রীদের হেনস্থা করার বিষয় প্রমাণ হলেও তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকার জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা অবিলম্বে অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আইনানুগ দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

ঘটনার সত্যতা জানার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষিকা আমোদিনি পালের মুঠোফোনে কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় পাবার পর তিনি ফোন কেটে দেন। পরে বার বার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

অভিযুক্ত অপর শিক্ষক বদিউল আলম জানান, হিজাব না পড়ায় ছাত্রীদেরকে শিক্ষিকা আমোদিনি পাল মারধর করেছেন। তিনি নিজে কাউকে মারেননি বলেও দাবি করেন।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্ম্মণ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, স্কুলে হিজাব পড়ে আসায় শিক্ষিকা আমোদিনি পাল ৫/৬ জন ছাত্রীকে মারধর করেছেন। ঘটনার দিন তিনি স্কুলের কাজে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে এসে বিষয়টি তিনি জেনেছেন। 

তবে এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই তিনি গ্রহণ করেননি। এতে তার দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান হিজাব না পড়ায় স্কুলছাত্রীদের অন্যায় ভাবে বেধড়ক পিটানোর কথা স্বীকার করে বলেন, আগে তাকে শোকজ করি। তারপর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, এবিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। এব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জাগরণ/আরকে