কোটালীপাড়ায় ৪ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আমার কোমড়, পা ও পাজর ভেঙ্গে যায়। এখন ক্রাসে ভর দিয়ে চলা ফেরা করি। কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে ১০ হাজার টাকার সহায়তা দেয়। একটি চায়ের দোকান দিয়ে স্ত্রী ও ২ সন্তানকে নিয়ে কোন রকম সংসার চালাচ্ছিলাম। ভুল চিকিৎসায় স্ত্রীর মৃত্যুতে আমি দু’ সন্তানকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি।
কথাগুলো বলছিলেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার উত্তরপাড়া (কুঞ্জবন) গ্রামের মো: বেলাল হোসেন মোল্লা। তিনি ভুল চিকিৎসায় স্ত্রীর মুত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকের বিচার দাবি করেছেন।
এ ঘটনার তদন্তে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নন্দা সেনগুপ্তা ৫ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছেন।
ওই গৃহবধূর স্বামী মো: বেলাল হোসেন মোল্লাকে রবিবার (১০ এপ্রিল) গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সামনে উপস্থিত হয়ে ভুল চিকিৎসায় স্ত্রী মৃত্যুর প্রমানাদি উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।
ভুল চিকিৎসায় স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় গত ৪ এপ্রিল কোটালীপাড়া উপজেলার উত্তরপাড়া (কুঞ্জবন) গ্রামের মোঃ বেলাল হোসেন মোল্লা কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
মো: বেলাল হোসেন মোল্লা বলেন, ৬ মার্চ আমার স্ত্রী সম্পা বেগম (৩২) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে তাকে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। ডাক্তার না পেয়ে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাওন সিকদার টুটুর বাসায় নিয়ে যাই। সেখানে ভিজিট দিয়ে তাকে দেখাই। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রেসক্রিপসন করে দিয়ে আমার স্ত্রীকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। বাড়ি নিয়ে ওই ওষুধ সেবন করাতে থাকি। পরের দিন তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ফের হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডা. শাওন সিকদার টুটুর মোবাইল নম্বর জোগাড় করে ফোন দেই। তিনি দূরে আছেন জানিয়ে ওই ওষুধ চালিয়ে যেতে বলেন। পরের দিন আমার স্ত্রী আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডা. শাওন সিকদার টুটু বলেন তাকে আগেই হাসপাতালে ভর্তি করা উচিৎ ছিল। তিনি (ডাক্তার) ভুল স্বীকার করে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবস্থায় ১০ মার্চ আমার স্ত্রীর শরীরের শক্তি হ্রাস পায় ও সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ডা. শাওন সিকদার টুটু তাকে ঢাকা অথবা খুলনা নিয়ে যেতে বলেন। আমি আমার স্ত্রীকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করি। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায় আমার স্ত্রীর শরীর গ্লুকোজ নেই। গ্লুকোজ ইনজেকশন দেয়ার প্রয়োজন ছিল। পরে গ্লুকোজ ইনজেকশন দেয়া হয়। সেখান থেকে আমার স্ত্রীকে নিউরো সাইন্স হাসপাতালে স্তানাস্তর করা হয়। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে ১৬ মার্চ আমার স্ত্রী মারা যায়। দীর্ঘ চিকিৎসায় ঋনগ্রস্থ হয়ে স্ত্রীর পেছনে ২ লাখ টাকা খরচ করেছি। ডা. শাওন সিকদার টুটুর ভুল চিকিৎসায় স্ত্রীকে হারিয়েছি। এখন ২ সন্তান নিয়ে অসহায়ের মত জীবন যাপন করছি। চিকিৎসক শাওন সিকদার টুটুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানাচ্ছি।
অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা: শাওন সিকদার টুটু বলেন, সম্পা বেগমের আগে থেকেই হার্ট, কিডনী ও ডিআইসি’র সমস্যা ছিল। এছাড়া তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। ডায়রিয়া নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। চিকিৎসার পর তার অবস্থা ভাল হলে তার স্বামী তাকে বাড়ি নিয়ে যায়। তখন তাকে ঢাকা অথবা বরিশালে হার্টের ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেই। ডায়রিয়ায় তার মৃত্যু হয়নি। ঢাকা মেডিকেলের মৃত্যু সনদে ইনকেফানাইটিসে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ভুল চিকিৎসার কোন প্রমান দিতে পারবেন না।
কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নন্দা সেনগুপ্তা বলেন, এ ব্যাপরে ৬ এপ্রিল ৫ সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের কাছে ওই গৃহবধূর স্বামীকে ১০ এপ্রিল সকাল ১০ টায় ভুল চিকিৎসার প্রমানপত্র উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। সাক্ষাতের পর মেডিকেল বোর্ড আমার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর এ ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জাগরণ/আরকে