আব্দুর রউফ রিপন
উত্তরের খাদ্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত জেলা নওগাঁ। কৃষি ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনাময় এবং বিশেষ করে ধান উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা নওগাঁ’র মাঠে মাঠে এখন কেবলই সবুজের সমারোহ। অবারিত দৃষ্টি জুড়ে শুধুই বোরো আবাদের ক্ষেত।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চলতি বোরো মৌসুমে এ জেলায় নির্ধারিত লক্ষমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলার কয়েক হাজার কৃষকদের কৃষি প্রণোদনার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ ও সার বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকার ধানের জমি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন এবং কোন সমস্যা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কৃষককে করনীয় এবং উপায় সম্পর্কে অবগত করছেন। তাই চলতি মৌসুমে জেলার কোন স্থানেই বোরো আবাদ কোন বড় ধরনের পোকা কিংবা রোগের আক্রমনের শিকার হবে না বলে আশা করছেন জেলার কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর নওগাঁর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: শামছুল ওয়াদুদ বলেন, এ বছর বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল ১লাখ ৮৫ হাজার ৮শ হেক্টর জমি। সেখানে কৃষকরা তাদের ১ লাখ ৮৯ হ্জাার ৪শ ৯০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। আবাদকৃত জমির মধ্যে হাইব্রীড জাতের রয়েছে ১৪ হাজার ২শ হেক্টর এবং উন্নত ফলনশীল উফশী জাতের রয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ২শ ৯০ হেক্টর। ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ১শ ৯০ হেক্টর বেশী জমিতে এবার বোরো আবাদ হয়েছে। সেই হিসেবে জেলায় চাল উৎপাদনের পরিমানও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি বিভাগের ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রা প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৩৭ মেট্রিক টন হিসেবে এ বছর বোরো মওসুমে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ লক্ষ ১১ হাজার ৯শ ৪৬ মেট্রিক টন। আর উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার ৭১ দশমিক ৩০ মেট্রিক টন চাল।
জেলায় চলতি মওসুমে হাইব্রীড জাতের মধ্যে হিরা-২, হিরা-৬, এসএল-৮ এইচ, ব্র্যাক হাইব্রীড, তেজ, সিনজেন্টা ১২০৩, চমক, এমএস-১সহ প্রায় ২৬ জাতের ধান আবাদ করা হয়েছে। অন্যদিকে উফশী জাতের মধ্যে অন্যতম ব্রিধান-২৮, ব্রিধান-২৯, ব্রিধান-৮১, ব্রিধান-৮৯, জিরাশাইল, খাটো-১০, কাটারীভোগ, শম্পা কাটারীসহ প্রায় ২৭ জাতের ধান রোপিত হয়েছে।
জেলার ১১টি উপজেলায় প্রতিটি উপজেলা ভিত্তিক বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে নওগাঁ সদর উপজেলায় ১৭ হাজার ৬শ হেক্টর, রাণীনগর উপজেলায় ১৮ হাজার ৮শ হেক্টর, আত্রাই উপজেলায় ১৮ হাজার ৬শ হেক্টর, বদলগাছী উপজেলায় ১১ হাজার ৭শ ৫০ হেক্টর, মহাদেবপুর উপজেলায় ২৮ হাজার ৪শ ২০ হেক্টর, পত্নীতলা উপজেলায় ১৯ হজার ৬শ হেক্টর, ধামইরহাট উপজেলায় ১৮ হাজার ৩শ ২০ হেক্টর, সাপাহার উপজেলায় ৫ হাজার ৮শ ৫০ হেক্টর, পোরশা উপজেলায় ৮ সহাজার ২শ হেক্টর, মান্দা উপজেলায় ১৯ হাজার ৮শ হেক্টর এবং নিয়ামতপুর উপজেলায় ২২ হাজার ৫শ ৫০ হেক্টর জমিতে।
এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ধানের অনুক’লে রয়েছে। এই ধরনের আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে এবং ঝড়সহ কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যদি হানা না দেয় তাহলে এবার জেলার ইরি-বোরো চাষ করা কৃষকরা স্মরনকালের রের্কড পরিমাণ ধানের ফলন পাবেন বলে আশাবাদি উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: শামছুল ওয়াদুদ।
জাগরণ/আরকে