মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চল মোল্লাকান্দি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে হামলা, পাল্টা হামলা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী ও শিশু গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে।
শনিবার (৯ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের নোয়াদ্দা ও চর বেশনাল এলাকায় কয়েক দফা হামলা-পাল্টা হামলায় জড়ায় ইউনিয়নটির বর্তমান চেয়ারম্যান রিপন পাটোয়ারী ও সাবেক চেয়ারম্যান মোহসিনা হক কল্পনা গ্রুপ। রিপন পাটোয়ারী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মোহসিনা হক কল্পনা মহিলা বিষয়ক সম্পাদক।
আহতদের মধ্যে রয়েছে- রিপন পাটোয়ারি পক্ষের নুসরাত (২৫), নুরুল মোল্লা (৫০), মামুন গাজী (৩৮), ইমরান গাজী (৩৫) ও কল্পনা পক্ষের মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ (২২), রানা ব্যাপারী (১৮), মো. শরিফ খান (২৫) সারোয়ার হোসেন (২৫), রিফাত হোসেন (৯) হনুফা বেগম (৬০)।
আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ চরবেশনাল এলাকার হনুফা বেগম (৬০) ও শিশু রিফাতকে (১০) মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে গ্রেফতার আতংকে অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে না বলে জানা গেছে।
এদিকে, এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রিপন ও মহসিনা পক্ষের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে রিপন পাটোয়ারী বিজয়ী হলে মহসিনা হকের লোকজনকে এলাকা ছাড়া করে দেয়া হয়। বেশ কয়েকদিন ধরে মহসিনার লোকজন এলাকায় ফিরে এলে আবারও দুপক্ষের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। শনিবার সকাল থেকে শুরু হয়ে দুপুর পর্যন্ত আবারও দুইপক্ষের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় দফায় দফায় গুলি বর্ষন ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে।
এদিকে, এ ঘটনা জানতে চাইলে রিপন ও কল্পনা পক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে।
রিপন পাটোয়ারী জানান, নির্বাচনে হেরে মহসিনা হক কল্পনার লোকজন আমাদের উপর ক্ষিপ্ত ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় আমার পক্ষের কয়েকজনকে মারধর করে তারা। পরে শনিবার সকালে আবারও কল্পনার পক্ষের বাবু কাজী, শওকত, জিয়া সর্দার, শওকত দেওয়ান, জাহাঙ্গীর সরকারের নেতৃত্বে আমার ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বারের বাসায়, সাবেক মেম্বার হুমায়ুন কবির মোল্লার বাসায় লুটপাট চালায় ও ইয়াজউদ্দিন মেম্বারের বাড়িঘর ভাঙচুর করে ৫০ লাখ টাকাট ক্ষয়ক্ষতি করে। আমার পক্ষের লোকজন প্রতিহত করলে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আমার ১০-১৫ জন আহত হয়েছে।
এদিকে, মহসিনা হক কল্পনা জানান, ইউপি নির্বাচনের পর আমার লোকজনকে গ্রামছাড়া করে দেওয়া হয়। কিছুদিন ধরে তারা এলাকায় ফিরতে শুরু করে। সকালে রিপন পক্ষের লোকজন হামলার জন্য ওৎপেতে ছিল। রিপন বাহিনীর কংশপুরা এলাকায় আইনউদ্দিন, মোসলেম, চরডুমুরিয়া এলাকার আরিফ, কামলা রুবেল, আমঘাটা এলাকার মাইনুদ্দিন, শাহআলম, আবু তাহের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। আমার লোকজনের ঘরবাড়ি ভাংচুর চালায়, মালামাল লুট করে নেয়। এলাকায় রিপনের ৬ আনি সাপোর্টারও নেই। সবজায়গায় আমার লোক। আমার লোকজনকে বের করে দেওয়ার জন্য হামলা চালাইছে। আমার পক্ষের গুলিবিদ্ধসহ ৭-৮ জন লোক আহত হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসাপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফেরদৌস জানান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক নারী ও এক শিশু হাসপাতালে আসে। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়েছে। হনুফা বেগমের ডান পায়ে ও রিফাতের বাম পায়ে গুলি লেগেছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। দুইপক্ষের সংঘর্ষে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এঘটনায় দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত রয়েছে।
জাগরণ/আরকে