• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২২, ০৭:০৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১২, ২০২২, ০৭:০৭ পিএম

পুলিশের সামনেই ‘আল্লাহু আকবার’ বলে ছুরি দিয়ে কাটে গলা

পুলিশের সামনেই ‘আল্লাহু আকবার’ বলে ছুরি দিয়ে কাটে গলা

শেরপুরে শ্রীবরদী উপজেলায় পুলিশের সামনে শেখবর আলী নামে একজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার নেপথ্যে ভারতীয় চোরাই গরুর ব্যবসা রয়েছে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার এমনটাই জানিয়েছেন ঐ উপজেলার রানীশিমুল ইউনিয়নের হালুয়াহাটি গ্রামের নিহতের স্বজন ও গ্রামবাসী।

নিহতের বোন মাহমুদা জানান, বছর পাঁচেক আগে ভারতীয় চোরাই গরুর ব্যবসা নিয়ে জাকির হোসেন জিকো ও শেখবর আলীর দ্বন্দ্ব হয়। একপর্যায়ে জিকোকে দা দিয়ে গলায় কোপ দেয় শেখবর। ঐ ঘটনার পর থেকেই শেখবর আলী স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এলাকা ছাড়ে এবং দীর্ঘদিন ঢাকায় বসবাস করে।

তিনি বলেন, জিকো আমার ভাইয়ের কাছে গরুপ্রতি এক হাজার চাঁদা চেয়েছিল। কিন্তু আমার ভাই চাঁদা দিতে রাজি হয়নি। এ কারণে জিকো আমার ভাইয়ের গলা টিপে ধরে। এতে রাগে তার গলায় দা দিয়ে কোপ দেয় আমার ভাই শেখবর। ঐ ঘটনায় মামলা না করে জিকো হুমকি দেয়- শেখবর যেদিন বাড়িতে আসবে সেদিন তাকে মারবে। ঘটনার পাঁচ বছর পর পুলিশ ও শত শত মানুষের সামনে জিকো আমার ভাইকে জবাই করে মেরে ফেলল।

উল্লেখ্য, গত ২৩ মার্চ সন্ধ্যায় হালুয়াহাটি গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জেরে পশু জবাইয়ের ছুরি দিয়ে শেখবর আলীকে জবাই করে হত্যা করা হয়। ঐ ঘটনায় আহত হয় আরো দুইজন। এ সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত ছিল। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ঘটনার ১৭দিন পর গত শনিবার রাতে এমডি সিরাজল (md sherajol) নামে একটি আইডি থেকে নৃশংস এ হত্যার ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করা হলে, তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়।

স্থানীয়রা জানায়, ভারতীয় চোরাই গরু নিয়ে জিকোর সঙ্গে দ্বন্দ্বের পর পাঁচ বছর ধরে শেখবর আলী স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকাতেই ছিলেন। এ সুযোগে তার জমি-জমা দখল করে জিকোর পরিবার। ঘটনার আগের দিন পর্যন্ত অভিযুক্তদের ভয়ে এলাকায় আসেননি শেখবর। তবে, জমি উদ্ধারের জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালান।

সূত্র জানায়, ঘটনার কয়েকদিন আগে শেখবর আলীর কয়েকটি গাছ কেটে নেয় জিকো। এ ঘটনায় ২২ মার্চ জিকোসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে জিডি করেন শেখবর আলীর মা মাহফুজা বেগম। মায়ের কাছে ঘটনা শুনে ২৩ মার্চ সকালে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শ্রীবরর্দীতে আসেন শেখবর। জিডির পরিপ্রেক্ষিতে ঐদিন শ্রীবরদী থানার এসআই ওয়ারেস ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় রাস্তা থেকে পুলিশের গাড়িতে ওঠেন শেখবর।

নিহতের মা মাহফুজা বেগমের দাবি, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে ঘটনার বিষয় জানতে চায়। ঐ সময় প্রতিপক্ষের কেউ সাড়া দেয়নি। এক পর্যায়ে শেখবর পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে এলে পরিস্থিতি বদলে যায়। মুহূর্তেই দা, লাঠি, ফলা নিয়ে শেখবরের দিকে তেড়ে আসে প্রতিপক্ষ। পুলিশ ও স্থানীয়রা ঠেকানোর চেষ্টা করলেও ২-৩ জন মিলে শেখবরকে মাথায় ও পায়ে কোপ দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর জিকোর ভাই সাইফুল গরু জবাইয়ের ছুরি দিয়ে ফিল্মি স্টাইলে জবাই করে শেখবরকে।

শেখবরের মা বলেন, আল্লাহু আকবার বলে আমার কলিজার টুকরাকে আমার সামনেই জবাই করা হলো। পাষণ্ডদের পায়ে ধরেও রক্ষা করতে পারিনি ছেলেকে।

ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ও শতাধিক মানুষের সামনেই জবাই করা হচ্ছে শেখবরকে। এ সময় পুলিশ ও স্থানীয়রা ফেরাতে চেষ্টা করলেও দমাতে পারেনি হত্যাকারীদের। এ পর্যায়ে ভয়ে পিছু হটে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।

স্থানীয়রা জানায়, শেখবরের হত্যার দৃশ্য এলাকার মানুষের কাছে এখনো দুঃস্বপ্নের মতো। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য যারা দেখেছে তারা ঘুমাতে পারে না, খাওয়া গলা দিয়ে নামে না। মানুষ স্তব্ধ হয়ে গেছে।

শ্রীবরদী থানার ওসি বিপ্লব কুমার বিশ্বাস জানান, এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি জিকো, তার ভাই জজ মিয়া ও সাইফুলসহ  ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে জিকো ও সাইফুল। এছাড়া এসআই ওয়ারেস আলীকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। এলাকায় নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।