ইন্দুরকানী প্রতিনিধি
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে চেতনা নাশক ঔষধ মেশানো সেহেরির খাবার খেয়ে অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ও এক সাংবাদিকসহ দুই পরিবারের ১০ জন অসুস্থ হয়েছেন।
এদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ ৫ জনকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং এক জনকে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার ভোর রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিন ইন্দুরকানী গ্রামের আউরাপোল এলাকায়।
বাড়িতে চুরির উদ্দেশ্যে একটি সংঘবদ্ধচক্র খাবারের সাথে চেতনা নাশক ঔষধ মেশানোর কারণে পাশাপাশি দুটি পরিবারের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে স্থানীয়রা জানান।
এদিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শুক্রবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার গাজীকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঘটনার খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে অসুস্থ্যদের দেখতে ইন্দুরকানী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম মতিউর রহমান এবং ইন্দুরকানী থানা পুলিশ স্থানীয় হাসপাতাল এবং ঐ দুটি বাড়িতে যান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দক্ষিন ইন্দুরকানী গ্রামের আব্দুল জব্বার গাজী ও প্রতিবেশি আনোয়ার হোসেনের বাড়ির সদস্যরা অন্যান্য দিনের মত শুক্রবার ভোর রাতে রোজা রাখতে সেহেরী খাবারের উদ্দ্যেশে উঠেন। সেহেরির খাবার খেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে এক একজন বমি করে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে জব্বার গাজীর পরিবারের জব্বার গাজীসহ সেহেরির খাবার খেয়ে তার স্ত্রী হালিমা বেগম (৫৫), মেয়ে কলেজছাত্রী জাকিয়া নাসরিন পপি (২৩), জব্বার গাজীর আপন ভাতিজা ইন্দুরকানী রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শাহাদাৎ হোসেন বাবু (৩৩), শাকিল গাজী (৪৫) ও শাকিলের স্ত্রী সুরাইয়া বেগম (৩৫) গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মধ্যে আব্দুল জব্বার গাজী, শাকিল গাজী ও তার স্ত্রী সুরাইয়া বেগমের কয়েক ঘণ্টা পরে জ্ঞান ফেরে।
এছাড়া একই গ্রামের পাশ্ববর্তি বাড়ির অবসরপ্রাপ্ত ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন (৯০), তার ছেলে শেখ হেলাল (৫০), হেলালের স্ত্রী নাসরিন নাহার (৪২) ও ছেলে নাফিজ মাহামুদও ভোর রাতে (২০) সেহেররি খাবার খেয়ে একই ভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন তার ছেলে হেলাল স্ত্রী নাসরিন নাহার ও ছেলে নাফিজ মাহামুদ প্রথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে গেছেন।
ওই ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের (স্থানীয় ) ইউপি মেম্বার মো. শাহাদাৎ হোসেন জানান, ওই রাতে কোন দুর্বৃত্তরা তাদের ঘরের খাবারের সাথে চেতনা নাশক ঔষধ মিশিয়ে রাখে। ভোর রাতে তারা রোজা রাখতে উঠে সেহেরীর হিসাবে ওই খাবার খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সকালে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসারত সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন বাবু সাংবাদিকদের জানান, ভোরে সেহেরি খাবার পর ফজরের নামাজ আদায় করার মুহূর্তে পরিবারের সবাইকে অস্বাভাবিক লাগে। এরপর একের পর এক সবাই বারবার বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি সহ তার পরিবারের ৬ জন অসুস্থ্য হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
অসুস্থ শেখ হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, চেতনা নাশক ঔষধ মেশানো খাবার খেয়ে তিনি ও তার পিতা, নিজের স্ত্রী, সন্তনসহ আমার পরিবারের ৪ জন অসুস্থ হয়ে পড়ার পর বাড়িতে চুরি সংঘঠিত হয়। এসময় নগদ অর্থ ও স্বর্নালংকার চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার মো. নুর উদ্দিন জানান, অসুস্থরা খাবারের সাথে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গুরুতর অসুস্থদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে।
ইন্দুরকানী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. এনামুল হক সাংবাদিকদের জানান, সেহরির খাবার খেয়ে দুই পরিবারের ১০ জন অসুস্থ হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও একজন পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এছাড়া একটি বাড়িতে চুরি হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তবে এ অসাধু চক্রকে ধরতে চেস্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
জাগরণ/আরকে