আশ্রয়ণের এই ঘরটি এখন আমার শান্তির নীড়। জানালেন, উপকূলীয় অঞ্চল পিরোজপুরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ২০০৭ সালের প্রলয়ংঙ্কারী ঘুর্ণিঝড় সিডর, আইলা, আম্ফানসহ নানা সময়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকা স্বামী হারা ৬৪ বছরের বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম।
বলেশ্বর নদের শাখা এক সময়ের প্রমত্তা কঁচা নদী তীরবর্তী পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার চরখালী এলাকার জেলে খলিল হাওলাদরের স্ত্রী রোকেয়া বেগম।
তিনি জানান, ১৪ বছর পূর্বে স্বামী হারা হয়ে তিন সন্তানকে নিয়ে নানা সময়ে নানা স্থানে থাকতেন আশ্রিতা হেয়ে। বর্তমানে উপজেলার চরখালী আশ্রয়ণে বসবাসরত ১৫ পরিবারের মধ্যে একটি রোকেয়া বেগমের। ২ শতাংশ জমির উপর টিনসেট একটি আধাপাকা ঘরে ছেলে শফিকুল এবং ছেলে বৌ লাবনীকে নিয়ে ছোট ঘরটিতে পরিপাটি ভাবে বসবাস করেন। ঘরের পাশে রোপন করেছেন ফল, সবজি।
অন্যদিকে, ঘর পাওয়া আরেক বৃদ্ধা হাসিনা বেগম জানান, ২৬ বছর পূর্বে দরিদ্র জেলে বাবা যৌতুক দিতে না পাড়ায় স্বামী সাকায়েত জোমাদ্দার ৭ মাসের একটি শিশু সন্তান রেখে চিটাগং গিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে তাদের কোন খোঁজ নেয়নি। সে থেকে এ বাড়ি ও বাড়ি ঝি এর কাজ করে সন্তানকে নিয়ে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে আসছেন। পরে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতনে কেয়ারে চাকরি হয় হাসিনার। গেল বছর আশ্রয়ণে একটি ঘর পেয়ে বেজায় খুশি সে।
রবিবার (১৬ এপ্রিল) সরেজমিনে গেলে ওই আশ্রয়ণের সুবিধাভোগী বাকিরা জানান, রোকেয়া, হাসিনা, দোলন সহ এখানে আমরা যারা ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের হলেও সকলে মিলে মিশে থাকি। ঘর পাওয়ার আগে যখন মানুষের বাড়ি বাড়ি আশ্রিতা থাকতাম তখন মনে হত পৃথিবীটা কত নিষ্ঠুর। আল্লাহ্তালার রহমতে প্রধানমন্ত্রীর উছিলায় একটি ঘর পেয়েছি। খারাপ ভালো যাই হোক অন্যের বাড়ি আশ্রিতা তো থাকতে হবেনা। নামাজ পরে শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করি যেন আমাদের মত আরো যারা অসহায়, ছিন্নমূল তাদেরও এভাবে একটি নিজস্ব ঠিকানা হয়।
এদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় দুই বছর পূর্বে ভাণ্ডারিয়া পৌর সভাসহ উপজেলার বাকি ছয়টি ইউনিয়নে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ৪৬০ জন, ভূমী ও গৃহহীণ পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরের ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ চলমান আছে যা আর ১/২ মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। যে সকল ঘর নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে সে সকল ঘরে সুবিধাভোগীরা বসবাস শুরু করেছে বলেও জানান দপ্তরের কর্মকর্তা মো. আওলাদ হোসেন।
অন্যদিকে বেশ কয়েকদিন পৌর সভাসহ উপজেলার বাকি ছয় ইউনিয়নে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কিছু কিছু সুবিধাভোগীরা পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় সরকারের পাওয়া ঘরের সাথে নিজেদের উদ্যোগে কিছু সম্প্রসারণ করেছে। পাশাপাশি হাঁস, মুরগি, পশু পালন ছাড়াও মৌসুমি সবজি চাষ করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক সীমা রানী ধর জানান, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার নামক প্রকল্পের আওতায় সরকারি ভাবে ১ম, ২য় ও ৩য় পর্যায়ে মোট ৬৬০ জনকে এ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। ১ম, ২য় পর্যায়ের ৪৬০ জন আশ্রয়ণসহ এ সকল ঘরে সুবিধাভোগীরা বসবাস শুরু করেছে এবং তৃতীয় পর্যায়ে যে ২শ জনকে জন প্রতি ২ শতাংশ জমির উপরে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনসেট আধাপাকা ঘর এবং পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার জন্য ইতো মধ্যেই আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
জাগরণ/আরকে