• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২২, ১১:২২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২০, ২০২২, ১১:২২ এএম

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে দিশেহারা বেগমগঞ্জ 

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে দিশেহারা বেগমগঞ্জ 

মো: জুয়েল রানা
বর্ষার আগেই ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের নদ পাড়ের মানুষ। ইউনিয়নের মোল্লার হাট এলাকায় প্রায় ৩ কি.মি. এলাকাজুড়ে অব্যাহত রয়েছে এ ভাঙন। 

ঐতিহ্যবাহী মোল্লারহাটসহ পার্শ্ববতী কয়েকটি গ্রামের ঘর-বাড়ি, গাছপালাসহ আবাদি জমি নদেরগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পানি কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে গত কয়েক দিনে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের তীব্রতা দেখা দিয়েছে। ইউনিয়নের বালাডোবা, চিতলিয়া, শেখ পালানু, পুর্বদুর্গাপুর গ্রাম ও মোল্লারহাট এলাকার পার্শ্ববর্তী ৫ গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদে চলে গেছে ঐতিহ্যবাহী মোল্লারহাট বাজারের অর্ধেক অংশ। প্রতিদিনই হারিয়ে যাচ্ছে গাছপালাসহ ফসলী জমি। হুমকীতে পড়েছে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪ প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৪ মাদ্রাসা।  

সরেজমিনে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর বালাডোবা গ্রামে গেলে দেখা যায, আব্দুস সামাদ (৫৫) ও হাবিবুর রহমান (৪৭) এর বাড়ির অর্ধেক নদে চলে গেছে। বাকী অর্ধেক ভিটায় একটি করে ঘরে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। দিনে ঘর সরানোর কাজ করছেন।

হাবিবুর রহমান জানান, ব্রহ্মপুত্র নদ এর আগে মোট ৫ বার বাড়ি ভেঙেছে তার। এবার নিয়ে ৬ বার। তীব্র ভাঙনের কবলে পড়ে একটি ঘরের বেড়া, চাল খুলে সরিয়ে অন্যের জায়গায় রেখেছেন। 

দু’একদিনের মধ্যে বাকী ঘর ও সরাতে হবে। কিন্তু ভিটেমাটি চলে গেলে কোথায় আশ্রয় নিবেন সে জায়গা এখনও খুঁজে পাননি তিনি।

পার্শ্ববতী ভোগলের কুটি গ্রামের মরিয়ম বেগম (২৭) এরও একই অবস্থা। ঘর একেবারেই ব্রহ্মপুত্রের কিনারে পড়ে আছে। তিনি জানান, বাড়িতে আর থাকার উপায় নেই। কখন যে পুরো ভিটাটাই চলে যায় ঠিক নাই। এ কারণে বাড়ির অনেক কিছুই সরিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখেছেন। কিন্তু কোথায় ঠিকানা হবে সেটা জানা নেই। আগে বাড়ি ভাঙনে পার্শ্ববর্তী কোথাও জায়গা করে নিলেই হতো। এখন অনেক টাকা দিয়ে সে জায়গা নিতে হয়। টাকা দেয়ারও উপায় নেই।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের কড্ডার মোড় এলাকার চায়না বেগম ও আসাম উদ্দিন জানান, প্রতি বছরই শুনি সরকার নদী বেঁধে দেয় কিন্তু দেয় না। এখন বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় মানুষের জায়গায় আশ্রয় নিয়ে আছি। কোন সাহায্য সহযোগীতাও পাচ্ছি না। 

বেগমগন্জ ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম জানান, যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে তাতে  দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অল্প সময়ের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী মোল্লারহাটসহ প্রায় ৩ কিলোমিটার বেশি এলাকায় বেশকিছু গ্রাম নদের গর্ভে চলে যাবে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো অনেকটাই খোলা আকাশের নীচে ও অন্যের জায়গায় কোন রকমে আশ্রয় নিয়ে দিনযাপন করছে। 

অন্যদিকে হুমকীতে থাকা পরিবারগুলো জানায়, ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কয়েকদফা বসতভীটা হারানোর পর এবার শেষ আশ্রয় টুকুও থাকবে না তাদের।

এ পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীসহ জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোন প্রতিকার না পাওয়ায় ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে নদের পাড়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী অব্যাহত রেখেছেন।

উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো: বাবলু মিয়া জানান, ব্রহ্মপুত্রের এই তীব্র ভাঙন বন্ধের জন্য আমি এলাকাবাসীকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তাসহ জেলা প্রশাসক ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা চাই খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোক। তাহলে ঐতিহ্যবাহী মোল্লার হাট, ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করা সম্ভব হবে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আব্দুল্লাহ-আল- মামুন জানান, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাট এলাকা গত বছরও ভাঙনের কবলে পড়েছিল। আমরা সেখানে জরুরী ভিত্তিতে কাজ করেছি। এবার হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারণে সেখানে ভাঙন তীব্র আকার ধারন করে। এই পরিস্থিতিতে আমরা জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলেই দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।

ঘর-বাড়ি, ফসলী জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষা করতে বর্ষার আগেই ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়রা।

জাগরণ/আরকে