পঞ্চগড়ে গত এক সপ্তাহ ধরে ডায়েরিয়া রোগের প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। গেল ২৪ ঘন্টায় ২৮ জন শিশু ডায়েরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এদিকে প্রতিদিন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালসহ জেলার ৪ উপজেলার সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। তবে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে বেডের অভাবে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে অধীকাংশ রোগীদের।
রোববার (২৫ এপ্রিল) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
খবর নিয়ে জানা যায়, এ জেলায় আবহাওয়া পরিবর্তন ও খাদ্যভাসের পরিবর্তনের কারণে দিন দিন ডায়েরিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার ৫ উপজেলায় প্রতিদিনই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলার প্রধান চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রোগীরা ভর্তি হচ্ছে। তবে ডায়েরিয়ায় বয়স্কের তুলনায় শিশুরাই বেশী আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে দিন দিন বহির্বিভাগ ও হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১০০ শয্যা হাসপাতালে শিশু শয্যা/বেড রয়েছে মাত্র ১৬ কিন্তু প্রতিদিনি তার দ্বিগুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। ফলে বেডের অভাবে হাসপাতালে মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা৷
এদিকে পুরো পঞ্চগড়ের জেলায় একজন মাত্র শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা৷ এতে হিমসিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কতৃপক্ষকে৷ এছাড়া বাকি চারটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই কোন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ৷ এছাড়া সময় মতো চিকিৎসক ও নার্সদের ডাকলে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রোগী ও স্বজনদের। বেশীর ভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসতে হয় রোগীর স্বজনদের। অনেকেই চিকিৎসা না পেয়ে ভাল চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে হাসপাতাল কতৃপক্ষে বলছে ২৫০ শর্য্যা নির্মাণাধীন হাসপাতাল ভবনের কাজ শেষের দিকে, ভবনের কাজ শেষ হলে সেবার মান আরও বাড়বে ।
চলতি মাসে এ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রায় ৫ শতাধিক রোগী ডাইরিয়ার চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। গত ২৪ ঘন্টায় ২৮ জন শিশু ডায়েরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও এর আগে গত মার্চ চিকিৎসা নিয়েছন ২৯৫ জন৷
তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় এলাকার ফারুক হোসেন বলেন, হঠাৎ করে আমার মেয়ের ডায়েরিয়া, পাতলা পায়খানা ও বমি। বাড়িতে চিকিৎসা করেছি কিন্তু সুস্থ্য না হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে আসছি। তবে আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ্য হয়েছে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার ফাতেমা বেগম বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি রাতে আর চিকিৎসক আসলো সকালে। বেড না পেয়ে মেঝেতে থেকে ছেলের চিকিৎসা করাচ্ছি। এখনও কিছু বুঝতেছি না, বমি বন্ধ হলেও পায়খানা বন্ধ হচ্ছে না।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসাল্টেন্ট (শিশু বিশেষজ্ঞ) ডা. মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গরম ঠান্ডা মিলে আবহাওয়ার যে বিরুপ প্রভাব তৈরী হয়েছে তা শিশুরা ধারন করতে পারছেনা। এছাড়াও খাদ্যাভাস একটি বড় বিষয়, রমজান মাসে মানুষ তেলে ভাজা ইফতার সামগ্রী খাচ্ছে এসব নানা কারণেই বিভিন্ন পেটের পীড়া দেখা দিচ্ছে। ফলে ডায়েরারি রোগীর আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন বহির্বিভাগ থেকে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যা বেশী অসুস্থ্য তাদের হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এবং চিকিৎসার করে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরছন। আমরা আমাদের সাধ্যমতো সেবা দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. কাওসার আহমেদ বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এসব ডায়রিয়া হতে পারে, ঠান্ডা গিয়ে গরম আসার সময় এটাতে এটা হয়ে থাকে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সেবা প্রধানের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কাজ প্রায় শেষের দিকে। কাজ শেষ হলে রোগীরা আরও বেশী সেবা পাবেন।
জাগরণ/আরকে