• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২২, ০২:৫৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২৬, ২০২২, ০২:৫৪ পিএম

ধীর গতিতে সড়ক নির্মাণে দুর্ভোগে এলাকাবাসী

ধীর গতিতে সড়ক নির্মাণে দুর্ভোগে এলাকাবাসী

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ রাজশাহী নগরীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর রেলগেট থেকে আমচত্বর এবং আমচত্বর থেকে নওহাটা ব্রিজঘাট পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার সড়কটি প্রশস্ত করছে। এরসঙ্গেই চলছে সড়কের দুপাশে ড্রেন নির্মাণের কাজ। তবে কাজে কচ্ছপের গতির কারণে এই সড়কের দুই ধারের বাড়িতে বসবাসকারীরা যেমন ঝুঁকিতে রয়েছেন, তেমনি যাত্রী ও এলাকাবাসী রয়েছে দুর্ভোগের মধ্যে।

রেলগেট থেকে আমচত্বর পর্যন্ত এফ কনস্ট্রাকশন ও রানা বিল্ডার্স নামের দুটি প্রতিষ্ঠান সড়ক ও ড্রেন নির্মাণের কাজ করছে। সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি ড্রেনের জন্য খনন করা হচ্ছে সড়ক সংলগ্ন ভবন ঘেঁষে। এতে অনেক ভবন ঝুঁকিতে রয়েছে। ভবনের মালিকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। 

নগরীর নওদাপাড়া, শালবাগান, ফিরোজাবাদ ও আমচত্বর এলাকায় সোমবার সকালে গিয়ে দেখা গেছে, সওজের ড্রেনের জন্য গভীর করে খননের ফলে অনেকের ভবনের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। চলাচলের পথও বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের। কোথাও কোথাও চলাচলের জন্য দু’একটি মাচা দেওয়া হলেও বেশিরভাগকেই চলতে হচ্ছে ভিন্ন উপায়ে ঝুঁকি নিয়ে। শালবাগান এলাকায় সড়কের পাশে থাকা বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের মহাস্থান রেজিমেন্টের সদর দপ্তরের প্রধান ফটকও বন্ধ হয়ে গেছে ড্রেনের খননের ফলে।

শালবাগান এলাকার একটি বহুতল ভবনের নাম ‘কৃষি পল্লী’। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আবাসনের জন্য কিছুদিন আগে ভবনটি করেছেন। কিন্তু সওজের ড্রেনের জন্য কয়েকদিন আগে ভবনের সামনে খনন করা হলে মাটি সরে গেছে। ভবনের সামনে বেজমেন্টের একটি অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। এখানে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির চারপাশ থেকে মাটি সরে গেছে। চরম ঝুঁকিতে কোনরকমে দাঁড়িয়ে আছে খুঁটিটি। এতে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

এ এলাকায় কালিপদ সাহা নামের এক ব্যক্তির চারতলা ভবনের সামনে ড্রেনের জন্য খনন করা হয়েছে। ফলে এই ভবনটিও ঝুঁকিতে পড়েছে। খনন করার কারণে ভবনের নিচতলায় থাকা রডের গুদাম থেকে রড বের করা যাচ্ছে না। গুদামটি কিছুদিন ধরে বন্ধই আছে। 

কালিপদ সাহার ব্যবস্থাপক জ্যেতিষ কুমার বলেন, এমনভাবে ড্রেনের কাজ হচ্ছে যে বিল্ডিংই ঝুঁকিতে পড়েছে। গুদামটা যে খুলব তারও উপায় নেই। একটা মাচাও দেয়নি চলাচলের জন্য।

নওদাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আরিফুল হকের দোতলা ভবনের বারান্দায় ফাটল ধরেছে ড্রেনের জন্য খনন করায়। তিনি বলেন, কোন রকম প্রটেকশন ছাড়াই কাজ করা হচ্ছে। এতে আমাদের ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে পড়েছে। মনে হচ্ছে বারান্দাটা ভেঙে পড়বে। ভেঙে না পড়লেও নতুন করে না করলে টিকবে না। যারা এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি সওজকে তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

এদিকে উন্নয়নকাজের যন্ত্রপাতি, মালামাল দীর্ঘদিন ধরে এগুলো রাস্তায় পড়ে থাকায় মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে যানবাহন চলাচলে। এসব এলাকায় নর্দমা ও রাস্তা নির্মাণ এবং সংস্কারকাজ করা হচ্ছে। কিন্তু এই কাজে ধীরগতির কারণে এবং রাস্তায় পরিমানমত পানি না দেয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে এলাকাবাসী ও চলাচলকারিরা।
 
রাস্তার অধিকাংশ এলাকাজুড়েই মাটি, বালু, পাথর ও কাঠ পড়ে আছে। আবার দিনের বেলাতে বালির ড্রাম গাড়িগুলোতে চলাচলে ব্যাপক বাধার মুখে পড়ছে চলাচলকারিরা। ওই রাস্তা দিয়ে একবার যাতায়াত করলেই জামা-কাপড় ধুলোবালিতে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও অনবরত রাস্তার পাশের বাড়ি-ঘরগুলো ধুলা-বালিতে সয়লাব হয়ে পড়েছে। খাদ্যে ধুলো-বালি পড়ায় বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে জনসাধারণ।
 
বূগরইল নওহাপাড়া এলাকার আলিফ বলেন, কাজে ধীরগতির কারণে সবাই পড়েছেন ভোগান্তিতে। আর এই দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে প্রায় দু’বছর থেকে। আরো কতদিন লাগবে কে জানে। দিনের বেলা রাস্তার মধ্যে কোনো রকমে চলাচল করা গেলেও রাতে খুব অসুবিধা হয়। 

ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, অনেকদিন আগে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু শেষ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। রাস্তার কাজ শেষ হতে দেরি হওয়ায় শুধু চলাচলে কষ্ট হচ্ছে তা নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। 

এ ব্যাপারে সওজের রাজশাহীর সড়ক উপ-বিভাগ-১ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নাহিনুর রহমান জানিয়েছেন  ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী হাইওয়ে থেকে ১০ মিটার, মানে প্রায় ৩৩ ফুট দূরে ভবন নির্মাণ করতে হবে। এই আইন না মেনে ভবন নির্মাণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার দায় ভবন মালিকেরই। আমাদের কিছু করার নেই। 

মো. নাহিনুর রহমান জানান, প্রায় পাঁচ ফুট গভীর করে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। ডেনের প্রস্থও পাঁচ ফুট। এ কারণে গভীর করে মাটি কাটতে হচ্ছে। তাই কিছু স্থাপনা ঝুঁকিতে পড়ছে বলে তিনি স্বীকার করেন। বড় বিষয় হচ্ছে উন্নয়ন কাজ করতে হলে ধুলা-বালি উড়বে। তবে যতদ্রুত সম্ভব কাজ এগিয়ে নেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জাগরণ/আরকে