• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৭, ২০২২, ০৬:০২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৮, ২০২২, ১২:২৮ এএম

ফেরিতে উঠতে বাইকারদের অসহনীয় দুর্ভোগ

ফেরিতে উঠতে বাইকারদের অসহনীয় দুর্ভোগ
বাংলাবাজার ঘাটে বাইকারদের দুর্ভোগ

ঈদ শেষে কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই বাংলাবাজার ঘাটে। মোটরসাইকেল, ফেরি, আর লঞ্চযাত্রীরা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হন এই ঘাটে এসে। শুক্রবার (৬ মে) বাংলাবাজার ঘাট দিয়ে কয়েক হাজার মোটরসাইকেল পার হয়। শনিবারও নদী পারের অপেক্ষায় হাজারো বাইকার।

তবে প্রচণ্ড রোদ আর সীমাহীন গরমে বাইকারদের খোলা আকাশে নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে ৮-৯ ঘণ্টা পর্যন্ত। এতে অনেক নারী-পুরুষ ও শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মাত্র দুবার ফেরি এসে কিছু মোটরসাইকেল নিয়ে গেছে। বাকিরা এখনো ঘাটে অপেক্ষমাণ।

নড়াইলের এক যাত্রী বাংলাবাজার ঘাটে এসে পৌঁছান শনিবার সকালে। মোটরসাইকেলে স্ত্রী ও চার বছরের শিশুসন্তানকে নিয়ে ঈদ করতে গেছেন গ্রামের বাড়ি। ঈদ শেষে আজ কর্মস্থলে ফিরতে রওয়ানা করেন। বাংলাবাজার ঘাটে এসে দেখেন মোটরসাইকেল পার করতে কেবল একটি ঘাট ব্যবহার হচ্ছে।

তিনি জানান, সকাল সাড়ে ১০টার কিছু পরে যান ঘাটের পন্টুনে। গিয়ে দেখেন মারাত্মক ফেরি সংকট। বিকেল ৩টা পর্যন্ত দুটি ফেরি ঘাটে পৌঁছালেও তিনি কোনোটিতেই উঠতে পারেননি।

এমন হাজারো বাইকার অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছে বাংলাবাজার ফেরিঘাটে। মাত্র পাঁচটি ফেরি দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১ জেলার ছোট-মাঝারি পরিবহনসহ মোটরসাইকেল পার করছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। ফলে ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে দুর্ভোগে পড়েছেন বাইকাররা। রোদে-ঘামে অসহনীয় দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে রাজধানীতে ছুটছেন তারা।

এদিকে বিআইডব্লিটিসির দাবি, বিশেষ ব্যবস্থায় একটি ঘাট বাইকারদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ফেরির সংখ্যা কম থাকায় কিছুটা সময় বেশি লাগছে।

শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বাংলাবাজার ঘাটে সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলাবাজার নৌরুটের চার নম্বর ঘাটে পন্টুনে দাঁড়িয়ে শতাধিক মোটরসাইকেল। আর পল্টুন থেকে প্রায় ছয়শো মিটার পর্যন্ত হাজারের ওপরে বাইক দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কেউ বাইকের ওপরে অস্থায়ী কিছু একটা দিয়ে শরীরকে রোদ থেকে রক্ষার চেষ্টা করছেন। অনেকে পন্টুনের ওপরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘাম ঝরাচ্ছেন। এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরপর একটি রো রো ছোট ফেরি ঘাটে আসছে। তাতে দেড় থেকে পৌনে দুইশো মোটরসাইকেলের জায়গা হয়। বাকিরা অপেক্ষায় রয়েছেন। এভাবে অনেকেই সকাল ৮টায় এসে বিকেল ৪টার দিকেও ফেরিতে উঠতে পারেননি।

উজ্জ্বল হোসেন নামে আরেক বাইকার বলেন, ফেরি কর্তৃপক্ষের সিস্টেমের ভুলের কারণে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারা অন্য ঘাট থেকে মাইক্রোবাস আর প্রাইভেটকার নিয়ে চার নম্বর ঘাটে আসে। এতে দুই ঘাটে লোড-আনলোড হতে অন্তত এক ঘণ্টা সময় বেশি লাগে। ফলে পারাপার হতেও বেশি সময় লাগে। যদি প্রতি ঘাটের একটি ফেরি বাইকারদের জন্য রাখতো, তাহলে এতো দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।

বিআইডব্লিউটিসির একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান, গত দুদিন সকাল থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর বাস, পিকআপ, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে কর্মস্থলমুখী যাত্রীরা বাংলাবাজার ঘাটে আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে ঘাট এলাকায় যাত্রীদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি লঞ্চ ও স্পিডবোট ছিল যাত্রীতে পরিপূর্ণ। লোডমার্ক অনুযায়ী লঞ্চগুলো যাত্রী পারাপার করছে। আর স্পিডবোটে যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এ রুটে রো রো ফেরি এনায়েতপুরী, বেগম সুফিয়া কামাল, বেগম রোকেয়া, কেটাইপ ফেরি কুঞ্জলতা, ক্যামেলিয়াসহ পাঁচটি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করছে বিআইডব্লিউটিএ।

ফেরিগুলোতে সাধারণ যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহন, কাঁচামালবাহী গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। তবে সীমিত সংখ্যক ফেরি চলাচল করায় ঘাট এলাকায় যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। পারাপারের অপেক্ষায় ঘাট এলাকায় চার শতাধিক যানবাহনের লাইন সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র গরমে দীর্ঘসময় ঘাটে আটকে থেকে নারী, শিশুসহ যাত্রীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন বলেন, এ রুটে পাঁচটি ফেরি দিয়ে যাত্রী, জরুরি গাড়ি ও কাঁচামালবাহী গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে। কিছু গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা সিরিয়াল অনুযায়ী সব গাড়িই পারাপার করছি। আর ৪ নম্বর ঘাট দিয়ে কেবল মোটরবাইক পার করছি। প্রতিটি বাইকের জন্য ৭০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। যদি কেউ বেশি ভাড়া চায়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর অনুরোধ করছি।

তিনি আরও বলেন, গতকাল চার হাজারের বেশি মোটরসাইকেল পারাপার হয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, আজ সেই সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়াবে।