• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২২, ০৮:০২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৬, ২০২২, ০৮:০২ পিএম

দিনে শ্রমিক রাতে ডাকাত

দিনে শ্রমিক রাতে ডাকাত

আরিফ হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। পিকআপ ভ্যানের মাধ্যমে রাস্তায় গতিরোধ করে যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির চেষ্টা ও হামলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত বেশ কিছুদিন ধরে ছড়িয়ে পড়েছে। ডাকাতি সংক্রান্ত এ ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে স্থানীয় সাধারণ জনগণ ও মহাসড়কে চলাচল করা যাত্রীসাধারণের মধ্যে বাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এসব ডাকাতির ঘটনা-সংক্রান্তে প্রয়োজনীয় তথ্য পর্যালোচনা পূর্বক এবং ভুক্তভোগীদের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত চক্রের সক্রিয় ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১। যারা সবাই ১৮ থেকে ২৩ বছরের যুবক। পেশায় তারা শ্রমিক এবং চালক।

গত রবিবার গভীর রাতে সোনারগাঁ থানাধীন সোনাখালী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ৩টি ককটেল, ২টি চাইনিজ কুড়াল, ১টি চাপাতি, ২টি ছোড়া, ২টি লোহার রড, ৬টি টর্চ লাইট ও ২টি লোহার পাইপসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলÑ সোনারগাঁয়ের নানাকি মধ্যপাড়া এলাকার মো. বাবুল হোসেনের ছেলে মো. আজিজুল ইসলাম (১৮), মোঃ দায়েনের ছেলে মো. হৃদয় (১৮), নয়াপাড়া এলাকার মোঃ ইব্রাহিমের ছেলে মোঃ ফারুক (১৯), বন্দরের শারেং সরকার চাপাতলী এলাকার মো. শফিকুল ইসলামের ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম সাইদুর (২০), ইটেরপুল এলাকার মোঃ দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মো. তালিফ হোসেন (২৩) এবং হরিপুর সিড়ি ব্রিজ এলাকার মোঃ ইব্রাহিমের ছেলে মো. রাজু আহম্মেদ (২২)।

সোমবার দুপুরে র‌্যাব-১১-এর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১-এর উপঅধিনায়ক মেজর হাসান শাহরিয়ার জানান, গত বেশ কিছুদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্র্ধষ ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। সবগুলি ডাকাতির ঘটনা প্রায় একই রকম। ধারণা করা হয়, বড় সংঘবদ্ধ ডাকাত দল অত্র এলাকাসমূহতে পরিকল্পিতভাবে ডাকাতি করছে। ডাকাতদের বয়স, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অস্ত্রের ধরন এবং লুন্ঠিত দ্রব্যাদি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে গোপনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাত প্রবণ এলাকায় কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে এলাকার কিছু সক্রিয় ডাকাত সদস্যকে সনাক্ত করে তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করা হয় এবং একইসাথে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হয়।

তিনি জানান, এই চক্রটি গত ১ এপ্রিল গভীর রাতে সোনারগাঁ থানাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মাহবুব আলমের পরিবারকে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি করেছিল। ডাকাতি হয়ে যাওয়া অধ্যাপক মাহবুব আলমের ১টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। ডাকাতি করা টাকা এবং লুট করা স্বর্ণালংকার উক্ত গ্যাং এর সদস্যরা ভাগ বাটোয়ারা করে নেয় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়।

মেজর হাসান শাহরিয়ার বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য। চক্রটি পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনকে টার্গেট করে তাদের ডাকাতি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। গভীর রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচল করার সময় নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন নির্জন স্থানে গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে চলন্ত গাড়ির গতিরোধ করে অতর্কিত হামলা করে এবং ধারালো অস্ত্র প্রদর্শণ করে চলাচলরত যাত্রীসাধারণদের ভয়ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে সাধারণ লোকজনদের জিম্মি করে ডাকাতি করে সিএনজি ও মোটরসাইকেলযোগে দ্রæত পালিয়ে যায়। দুষ্কৃতিকারী এই ডাকাত দলের সদস্যরা ডাকাতি করতে গিয়ে কখনও কখনও জনসাধারণকে মারধর, ছুরিকাঘাত ও গাড়ি ভাংচুরসহ গুরুতর জখম করে থাকে। দীর্ঘদিন দিন ধরে তারা এসব কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

গ্রেপ্তারকৃতদের অন্যান্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান এবং গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

ইউএম