• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২২, ০৮:২৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৩, ২০২২, ০৮:২৬ পিএম

কারাগারে প্রদীপের স্ত্রী চুমকি

কারাগারে প্রদীপের স্ত্রী চুমকি

স্বামী প্রদীপ কুমার দাশ মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বয়ে বেড়ালেও তার অবৈধ সম্পদের অংশীদার স্ত্রী চুমকি কারণ দীর্ঘদিন ধরেই ছিলেন লাপাত্তা। সন্তানদের নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা এলাকায় ‘লক্ষ্মীকুঞ্জ’ নামে ছয়তলা বাড়িটিতে থাকতেন চুমকি। কিন্তু ২০২০ সালে সিনহা হত্যাকাণ্ডে প্রদীপ গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই আত্মগোপনে চলে যান তিনি।

এভাবে দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় আত্মগোপনে থাকার পর সোমবার দুপুরে দুদকের মামলায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন চুমকি। শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

একইদিন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিনের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে দুদকের পক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এ নিয়ে মামলাটিতে ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আগামী ২৯ মে আসামিপক্ষ থেকে রিয়াজ উদ্দিনকে জেরা করার কথা রয়েছে।

এদিকে, দীর্ঘ সময় আত্মগোপনে থাকার পর প্রকাশ্যে আসায় ‘এতদিন কোথায় ছিলেন চুমকি’ এমনই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বমহলে।

কারো কারো মতে, চট্টগ্রামেই কোথাও লুকিয়ে ছিলেন চুমকি। তবে বিভিন্ন তথ্যমতে- সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন তিনি। ভারতের আগরতলা, কলকাতার বারাসাত ও গৌহাটিতে রয়েছে প্রদীপ-চুমকি দম্পতির নিজস্ব বাড়ি। লক্ষ্মীকুঞ্জ ফাঁকা করে সেখানেই পাড়ি জমান তিনি।

পলাতক থাকা অবস্থায় চুমকির অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তার বাবা অজিত কুমার কারণ বলেছিলেন, মেয়ে কোথায় আছে সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। চুমকির ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরও জানেন না বলে দাবি করেছিলেন তিনি। 

সোমবার চুমকির আত্মসমর্পণের পর বাবা অজিত কুমার কারণের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। 

অন্যদিকে, পলাতক চুমকির অবস্থান সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্য ছিল- চুমকি যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পুলিশ সদর দফতরে চিঠি দেয় দুদক। এর বাইরে আর কোনো তথ্য জানাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে আত্মসমর্পণের পরও প্রশ্ন রয়ে গেছে- এতদিন কোথায় ছিলেন চুমকি।

২০২০ সালের ২৩ আগস্ট অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে মামলাটি করেন দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন। পরে গত বছরের ২৬ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়।

একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্রের ওপর শুনানি হয়। ২০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিনের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলার এজাহারে উল্লিখিত সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেয় আদালত। ১৫ ডিসেম্বর এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়।

এর আগে, প্রদীপের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠায় ২০১৮ সালের জুন মাসে অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রদীপ ও চুমকির নামে অস্বাভাবিক সম্পদের তথ্যও পান দুদক কর্মকর্তারা। এরপর সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য বলা হলে একই বছরের মে মাসে দুদকে বিবরণী জমা দেন তারা।

দুদকের দেয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, নগরীর পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, পাঁচলাইশে বাড়ি, ৪৫ ভরি সোনা, একটি ব্যক্তিগত গাড়ি, একটি মাইক্রোবাস, ব্যাংক হিসাব এবং কক্সবাজারে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে চুমকির নামে। তার চার কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিপরীতে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় দুই কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকা। এক্ষেত্রে দুই কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পায় দুদক। এছাড়া চুমকি নিজেকে মৎস্য ব্যবসায়ী দাবি করলেও এ ব্যবসায়ের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

পাথরঘাটার ছয়তলা বাড়ির বিষয়ে চুমকি সে সময় দুদককে জানান, ২০১৩ সালে বাড়িটি তার বাবা তাকে দান করেন। যদিও চুমকির অন্যান্য ভাই ও বোনদের তার বাবা কোনো সম্পত্তি দান করেননি। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৬ সালে শ্বশুরের নামে বাড়ির জমি কেনেন প্রদীপ। এরপর ছয়তলা বহুতল ভবন গড়ে তোলেন।