• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২২, ০৮:২৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ৬, ২০২২, ০৮:২৯ পিএম

একটি থেকে এখন দুই শতাধিক গাভি

একটি থেকে এখন দুই শতাধিক গাভি

খামারে এখন আছে দুই শতাধিক গাভি ও বাচুর। এর মধ্যে ৮০টি গাভি দুধ দিচ্ছে। প্রতিটি গাভি ১৪ থেকে ১৫ লিটার পর্যন্ত দুধ পাওয়া যায়। এ খামারে উৎপাদিত দুধের বিশাল চাহিদা রয়েছে জেলাজুড়ে। প্রতিদিন স্থানীয়রা এসে দুধ নিয়ে যায় খামার থেকে। এ ছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও যাচ্ছে দুধ।

সরেজমিনে সদর উপজেলার মীরকাদিম পৌরসভার রামগোপালপুর এলাকায় দেখা যায়, বিশ্বজিৎ বণিক ও তাদের যৌথ পারিবারিকভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে মা ডেইরি ফার্ম নামের গরুর খামারটি। বিশাল খামারের সামনে রয়েছে বড় একটি মাঠ। যার মধ্যে ভ্যানে ভরে রাখা আছে ঘাস ও কচুরিপানা। খামারের ভেতরে মটরের পানির মাধ্যমে গোসল করানো হচ্ছে গরুগুলোকে। তা ছাড়া সব সময় খামারটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে একাধিক মটর।

শুরুর গল্পটা ছিল অন্য রকম। জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে ওই এলাকার কালু বণিক নিজ বাড়িতে শুরু করেছিলেন। তার ব্যবসায়ী বন্ধু সদর উপজেলার চর মশুরা গ্রামের মৃত আকরাম আলী ভূইয়া তখন একটি গাভি কালু বণিককে উপহার দিয়েছিলেন। সেই গাভিটি তিনি যত্ন করে লালনপালন শুরু করেন। তারপর একে একে জন্ম দেয় বেশ কিছু বাচুর। পরে তিনি এগুলোকে বিক্রি না করে সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। এভাবে একদিন গড়ে ওঠে খামার। প্রায় ৩০ বছর আগে কালু বণিক মারা যান। কিন্তু তার পরিবার আজও ধরে রেখেছে খামারটি। পরবর্তী সময়ে খামারের গাভিগুলোকে প্রজননের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নত জাতের গাভিতে রূপান্তর করে গড়ে তোলা হয়েছে ‘মা ডেইরি ফার্ম’। এখন সেই খামারে গাভির সংখ্যা দুই শতাধিক। এদের মধ্যে দুধ দেয় প্রায় ৮০টি গাভি। এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ৮ থেকে ১০ জনের। খামারটির ভেতরে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত রয়েছে বেশ কিছু লোক। মটরের তোলা পানিতে সব সময় ঝকঝকে চকচকে রাখা হয় খামারটিকে।

মা ডেইরি খামারের মালিক বিশ্বজিৎ বণিক বলেন, আমার গরু অনেক বছর আগের। এই গরু আমার বাবা পালছেন। বাবার রেখে যাওয়া গরু আমি কখনো বেচাবিক্রি করি নাই। আমি সব সময় প্রাকৃতিক খাবার খাওয়াই। তাই আমার খামারে উৎপন্ন দুধের মানও খুব ভালো। আমার খামার থেকে দুধ এলাকার লোকজন নিয়ে যায়। আমাদের খামারের দুধ মীরকাদিমের বিভিন্ন মিষ্টান্ন ভান্ডারসহ স্থানীয় গোয়ালরা নিয়ে যান। তা ছাড়া ঢাকায়ও বিক্রি হয়।

বাবার স্মৃতিচারণা করে বিশ্বজিৎ বলেন, আমার বাবার যখন ২০ কি ২২ বছর বয়স, তখন তাকে একটি গাভি উপহার দিয়েছিলেন তার বন্ধু। বাবা ছোট পরিসরে শুরু করেছিলেন। আমি বাবার রেখে যাওয়া গরুগুলো বিক্রি করিনাই। ধীরে ধীরে বাবার রেখে যাওয়া গরুগুলো হতে খামারটি গড়ে তুলেছি। আমার খামারে এখোন দুধ দেওয়ার ৮০টি গুরু রয়েছে। প্রতিটি গরুকে আমরা দুই বেলা দুধ দোহান করি । দুই বেলায় প্রতিটি গরু ১৪/১৫ কেজি দুধ দেয়।

খামারের মালিক বিশ্বজিৎ বণিক জানান, তার খামারে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে গাভি লালন-পালন করা হয়। তিনি নিজে জমি ইজারা নিয়ে ওই জমিতে ঘাস উৎপাদন করেন। এ ছাড়া কচুরিপানা সংগ্রহ করে গাভিগুলোকে খাওয়ান। 

তাছাড়া তার খামারের পাশেই রয়েছে ঐতিহাসিক কমলাঘাট নদীবন্দর, যেখানে রয়েছে একাধিক খৈল, ভুসি, চালের আড়ত। ওই সব আড়ত থেকে উৎকৃষ্ট মানের খৈল ভুসি ও চালের কুড়াসহ বিভিন্ন গোখাদ্য সংগ্রহ করে তিনি তার খামারের গরুগুলোকে খাওয়ান। যে কারণে তার খামারে উৎপাদিত দুধ খুবই উন্নত মানের এবং পুষ্টিকর হয়ে থাকে বলে দাবি তার।

বিশ্বজিৎ বলেন, প্রতিদিন বর্তমানে আমার খামারে সাড়ে ১৬ থেকে ১৭ মণ দুধ হয়। কিন্তু বর্তমানে দুধের দাম কম। ৪০ টাকা লিটার দুধ বিক্রি করতেছি। আমার খামারে ১৭ থেকে ১৮ জন শ্রমিক কাজ করে। প্রতি শ্রমিককে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দিই। সব মিলিয়ে এখন আমি মাসে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা লোকসান গুনি। তবে দুধের দাম বাড়লে লোকসান গুনতে হবে না।