• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৯, ১০:১২ এএম

মুন্সীগঞ্জের বেদে সম্প্রদায় অস্তিত্ব সংকটে

মুন্সীগঞ্জের বেদে সম্প্রদায় অস্তিত্ব সংকটে
মুন্সীগঞ্জের বেদে সম্প্রদায়- ছবি: জাগরণ


বেদেরা অন্যতম সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী। বেদে সাধারণভাবে বাদিয়া বা বাইদ্যা নামে পরিচিত একটি ভ্রাম্যমাণ জনগোষ্ঠী। সাপের ছোবল সামলানোর কৌশল রপ্ত করলেও বেদেরা ‘সভ্যতার’ ছোবল থেকে বাঁচতে পারছে না। তারা আজ অস্তিত্ব সংকটে। পেশায় পরিবর্তন আসছে। আধুনিকতার প্রভাব পড়ছে পোশাক-আশাকেও। নৌকায় বাঁধা জীবন তাদের ক্রমেই পাল্টে যাচ্ছে।

তারা আগের মতো ভালো নেই। জীবনের সঙ্গে নৌকায় বাঁধা পড়েছে তাদের ভাগ্যও। মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং, শ্রীনগর, সিরাজদিখান, টঙ্গীবাড়ী ও মুন্সীগঞ্জ সদরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে প্রায় ৬০-৬৫ হাজার বেদে সম্প্রদায়ের লোক। খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ সব ধরনের মৌলিক অধিকার থেকে বেদেরা বঞ্চিত। যদিও তারা মুন্সীগঞ্জের ভোটার। তারা মুসলমান ধর্মের অনুসারী। সব মিলিয়ে নানা সমস্যা ও নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে মুন্সীগঞ্জের বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন অধিকার বঞ্চিত হয়ে অতি কষ্টে দিন যাপন করছেন।

ছবি: জাগরণ

মুন্সীগঞ্জ শহর লাগোয়া কালিদাস নদীতে ডিঙি নৌকায় বসবাসকারী বেদেরা জানালেন, তারা আর্থিক সংকটে রয়েছেন। সরকার সাহায্য করলে তারা নৌকার বসতি ছেড়ে ঘরবাড়ি তুলে থাকতে পারতেন। মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার কমলাঘাট এলাকার ইছামতি নদী পাড়ের বেদেরা জানালেন, তারা কোন সরকারি অনুদান পান না। সরকারের লোকজন দিবে বলে দেয় না।

বেদেদের অনেকেই পেশা বদলিয়েছে। বেদেদের স্কুলে যাওয়ার হার কম। অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে হওয়ায় আগেই স্কুলে যাওয়ার আগেই মেয়েরা ঝরে পড়ে। তারা বেদে পেশায়ই থাকতে স্বাচ্ছন্নবোধ করছে। তারা লেখাপড়া না জানায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা কঠিন।

বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ঐতিহাসিক গোয়ালী মান্দ্রা ও মৌছা মান্দ্রায় গড়ে উঠেছে বেদে পল্লী। এখানকার সবাই বেদে। এছাড়া, লৌহজংয়ের কনকসার বটতলা ও কুমারভোগের খড়িয়ায়ও রয়েছে বেদে সম্প্রদায়ের বসতি। শুধু লৌহজং উপজেলায়ই রয়েছে অন্তত ১৮-২০ হাজার বেদে। এদের মধ্যে ৭ হাজারের উপরে রয়েছে ভোটার। কুমারভোগ এবং হলদিয়া-এই এ দুটি ইউনিয়নে বেদেদের ভোটই বেশি।

  ছবি: জাগরণ

এছাড়া, মুন্সীগঞ্জ সদরের কালিদাস নদী, মুন্সীরহাটের বাগেরহাট, মিরকাদিম পৌরসভার কমলাঘাটের (রিকাবীবাজার) ইছামতি শাখা নদীর খালের পাড়ে, টঙ্গীবাড়ী উপজেলার টঙ্গীবাড়ী-হাসাইল খালের মোকাম খোলা, ধামারণ, সিরাজদিখানের ইছামতি নদীর গোডাউন ঘাট, কংসপুরা পদ্মহেম ধাম বটতলা, শেখর নগর ও শ্রীনগর উপজেলার খালপাড় এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অন্তত ৬০-৬৫ হাজার বেদে।

এদিকে, খালে পানি শূন্যতা ও কিছু খাল দখলদাররা ভরে ফেলায় বেদেরা জায়গা পরিবর্তন করছে। আবার অনেকে খালের পাড়ে নৌকার বসতি ছেড়ে তাবু টানিয়ে বসবাস করছে। বংশপরম্পরায় নদীতে ও নদীর পাড়ে তাবু টানিয়ে বসবাস করে আসছে ওই বেদে পরিবারগুলো। ঢাকার পাশের জেলা মুন্সীগঞ্জে অতি দ্রুত নগরায়ণ ঘটছে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন মার্কেট, আধুনিক দোকানপাট। তাই গাঁয়ের পথে ঝুড়ি মাথায় কিংবা কাঁধে লম্বা ব্যাগ ঝোলানো বেদে পরিবারের সদস্যদের আগের মতো চুড়ি-ফিতা বিক্রি করতে দেখা যায় না। অভাবের তাড়নায় এই বেদেরা এখন আদি পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।

টিএফ