বিয়ে করে নতুন নারী সদস্য সংগ্রহ শুরু করেছে জঙ্গিরা। বিয়ের পরই তারা নিজের স্ত্রীকে জঙ্গির সকল কৌশল শিখানোর পাশাপাশি ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দিয়ে মানসিকতাকে ভিন্ন পথে ধাবিত করছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ চাঞ্চল্যকর তথ্য জানান।
জঙ্গিরা প্রথমে টার্গেট নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলা। এরপর পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করা। পরিচয়, সম্পর্ক স্থাপন ও বিয়ে পুরো প্রক্রিয়ায় প্রেমিক হিসেবে একজন সুদর্শন পুরুষকে সামনে নিয়ে আসা হলেও পেছন একাধিক নারী জড়িত থাকে, যারা ধর্মভীরু নারীদের টার্গেট করে মোটিভেটেড করে।
র্যাবের পরিচালক লে. কর্নেল মো. এমরানুল হাসান বলেন, কৌশলগত কারণে জঙ্গিরা নারী সদস্য বাড়াতে চাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ধর্মভীরু নারীদের টার্গেট করে তারা। এরপর বিয়ের ফাঁদে ফেলে জঙ্গিবাদে জড়াতো সেই নারীকে। সম্প্রতি নাঈমা ও ফারুক নামের দুজনকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, দুই মাস আগে চট্টগ্রামের তরুণী সাফিয়া আক্তার তানজীর সঙ্গে ফেসবুকের একটি গ্রুপে কয়েকজন মেয়ের পরিচয় হয়, যাদের একজন নাঈমা। এই নাঈমার মাধ্যমে তানজীর পরিচয় হয় বরিশালের একটি স্কুলের শিক্ষকের সঙ্গে। তার নাম সহিফুল ওরফে সাইফ। এই সাইফের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিভিন্নভাবে তানজীকে উৎসাহিত করে নাঈমা। তানজীও সেই ফাঁদে পা দেয়। একপর্যায়ে গত ২৬ জুন সাইফকে বিয়ে করার জন্য নাঈমার সঙ্গে বাড়ি ছাড়ে তানজী।
বাড়ি ছেড়ে বরিশালে পৌঁছানোর পর তানজীকে নাম পরিচয় গোপন করে নাঈমার বোন হিসেবে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেয় সাইফ। তানজীর বাবা-মায়ের নামের জায়গায় বসানো হয় নাঈমার বাবা-মায়ের নাম। এরইমধ্যে তানজীর সঙ্গে সাইফের বিয়েও হয়। এই সময়ের মধ্যে তানজীকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্নভাবে প্ররোচনা চালায় সাইফ ও নাঈমা।
এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে সাফিয়া আক্তার তানজী (২২) নামে এই তরুণী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব। র্যাব-২-এর একটি টিম গত ৮ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বরিশালের একটি মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে তানজীকে উদ্ধার করে এবং গ্রেফতার করা হয় জান্নাতুল নাঈমাকে। তবে পালিয়ে যায় সাইফ। নাঈমার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে গতকাল মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মো. আফজাল হোসেনকে (২৩) গ্রেফতার করা হয়েছে। নাঈমা ও আফজাল জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। তারা সদস্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিল।
নাঈমার তথ্যানুযায়ী র্যাব কর্মকর্তা মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, জান্নাতুল নাঈমা চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। ২০১৬ সাল থেকে সে নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে আসছে। ফেসবুকের একটি গ্রুপে বিভিন্ন নারী সদস্যদের মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে সে আনসার আল ইসলাম জঙ্গি সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত হয়। সে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মহিলা সদস্য বৃদ্ধিতে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
গ্রেফতারকৃত মো. আফজাল হোসেন সম্পর্কে র্যাব জানায়, সে দীর্ঘদিন ধরে আনসার আল ইসলাম-এর সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে রাজধানী ঢাকার নিকটস্থ একটি এলাকার স্থানীয় সংগঠক। জিজ্ঞাসাবাদে সে সংগঠনের নির্দেশনা অনুসারে মহিলা সদস্যদের দলে অন্তর্ভুক্তিসহ নারী সদস্যদের দ্বারা নাশকতা পরিকল্পনার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
এইচ এম/টিএফ