• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯, ১১:৩৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯, ১১:৪০ এএম

ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে আতঙ্কিত দেশের ক্রীড়াঙ্গন

ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে আতঙ্কিত দেশের ক্রীড়াঙ্গন
ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র ও ওয়ান্ডারার্সের ভেতরে চলে কোটি টাকার ক্যাসিনো ব্যবসা। ফটো : সংগৃহীত

অর্থ সংকটের জন্য প্রতি বছর ভালো খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গড়তে না পারার কারণে অতীতে বহুবার খবরের কারণ হলেও রাজধানী ঢাকার ঐতিহ্যবাহী তিন ক্লাব ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র ও ওয়ান্ডারার্সের ভেতরে ২৪ ঘন্টাই চলে কোটি-কোটি টাকার রমরমা ক্যাসিনো ব্যবসা। অনেকেরই ধারণা শুধু এই তিনটি ক্লাবেই নয়, দেশের ক্রীড়াঙ্গনের যত পুরোনো ক্লাব রয়েছে তার প্রায় সবখানেই অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। 

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা দক্ষিণের যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার মালিকানাধীন ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান চালিয়ে দুই নারীকর্মীসহ ১৪২ জনকে আটক করা হয়। ক্লাবে পাওয়া গেছে মদ আর জুয়ার বিপুল আয়োজন। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নগদ ২৪ লাখ টাকা।

মতিঝিল থানার পাশেই অবস্থিত ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবটি ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলার জন্য ক্রীড়ামোদীদের কাছে পরিচিত হলেও এই ক্লাবে ক্যাসিনোর আদলে জুয়ার আসর পরিচালনার বিষয়টি স্থানীয়দের ভীষণ বিব্রত করতো। জানা গেছে, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই ক্লাবের কমিটিতে যুবলীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর ক্লাবে তাদের প্রভাব বাড়তেই থাকে। 

অভিযোগ রয়েছে, ক্লাবের ভেতর নিয়মিত মদপানের আসর বসানোর পাশাপাশি হাউজি খেলা চালু করেন তারা। এরপর এখানে জুয়ার আসর অব্যাহত হারে বাড়তেই থাকে। শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনিতে বেড়ে ওঠা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এই ক্লাবের সভাপতি এবং অন্যতম জুয়া পরিচালনাকারী বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্লাবের চেয়ারম্যান স্থানীয় সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন।
 
ঘরোয়া ফুটবলের দ্বিতীয় স্তরের খেলা বিসিএলে ২০১৬-১৭ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব সেবার টাকার অভাবে দল চালানোর মতো আর্থিক অবস্থা নেই জানিয়ে প্রথম বিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলতে রাজি না হওয়ায় বেশ আলোচিত হয়েছিল। অথচ, সেই মৌসুমের রানার্সআপ দল সাইফ স্পোটিং ক্লাব পেশাদার লীগে যাত্রা শুরু করে এখন দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা পেশাদারি ক্লাব হিসেবে প্রশংসিত হয়ে চলেছে। আর এখন ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব এখন আইনবিরোধী কাজের দায়ে ব্যাপক সমালোচিত। 

ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবের ক্যাসিনো। ছবি : কাশেম হারুন

একসময় আবাহনী এবং মোহামেডানের ক্লাসিক দ্বৈরথের মাঝেও মাঠের খেলায় নিজেদের দাপট দেখানো পেশাদার লীগের দল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র অনেক বছর ধরেই ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে মানসম্মত খেলোয়াড় আনা তো দূরের কথা, ফুটবলারদের যে ভবনে রাখা হয় দীর্ঘদিন তার ভাড়াই মেটাতে পারেনি ক্লাব কর্তৃপক্ষ। 

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল সাইফ পাওয়ারটেক। চলতি বছরের ২৩ জুলাই জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের প্রধান কার্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি’র সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের স্পন্সর হতে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। অথচ তাদের ক্লাবে রাত হলেই বসে কোটি টাকার জুয়ার আসর। 

১৯৯৭-৯৮ এবং ২০০০-০১ মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। ২০০৩ সালে জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে তারা। এশিয়ান ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ, এশিয়ান কাপ উইনার্স কাপ ও এএফসি কাপেও খেলেছে ঐতিহ্যবাহী এই দলটি। 

ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অপরাধে সিলগালা হয়েছে ফুটবল ক্লাব ঢাকা ওয়ান্ডারার্সও। উদ্ধার হয়েছে লাখ লাখ টাকা। অথচ এই ক্লাবের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। বঙ্গবন্ধু এক সময় এই ক্লাবেরই ফুটবলার ছিলেন। 

অনেকেরই ধারণা শুধু এই তিনটি ক্লাবেই নয়, দেশের ক্রীড়াঙ্গনের যত পুরোনো ক্লাব রয়েছে তার প্রায় সবখানেই অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। ইতোমধ্যেই ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাবকে সিলগালা করা হয়েছে। 

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর ধানমণ্ডি কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে ক্যাসিনো থাকার গোয়েন্দা খবরে সেখানে অভিযানে নামে র‍্যাব। সেখান থেকে ক্লাবটির সভাপতি ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শফিকুল আলমকে র‍্যাব হেফাজতে নেয়। সেখানে অভিযান চালিয়ে র‍্যাব জুয়া খেলার সরঞ্জাম, নাইন এম এম পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি ও হলুদ রঙের ইয়াবা উদ্ধার করে। একইদিন র‌্যাব সদস্যরা অভিযান পরিচালনার উদ্দেশে ধানমণ্ডি ক্লাব, এজাক্স ক্লাব, কারওয়ান বাজার মৎসজীবী ক্লাব ঘিরে রাখে। 

আরআইএস 

আরও পড়ুন